ইউক্রেনের আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন: জেলেনস্কি
Share on:
ইউক্রেনের আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার দাবি, ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি রুটগুলোর পাশাপাশি রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করার জন্য কিয়েভের আরও আকাশ প্রতিরক্ষা প্রয়োজন।
রাজধানী কিয়েভে খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতার সময় জেলেনস্কি এই মন্তব্য করেন। রোববার (২৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার কিয়েভে খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত সম্মেলন ‘গ্রেন ফ্রম ইউক্রেন’-এ বক্তৃতা করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এই শীর্ষ সম্মেলনে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বারসেট এবং লিথুয়ানিয়ান প্রধানমন্ত্রী ইনগ্রিদা সিমোনিতে-সহ ইউরোপীয় দেশগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এখানে বক্তৃতার সময় ইউক্রেনের আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজনের কথা জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘(ইউক্রেনে) আকাশ প্রতিরক্ষার ঘাটতি রয়েছে, এটি কোনও গোপন বিষয় নয়।’
এর আগে শনিবার ইউক্রেনে বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। কিয়েভের মেয়র বলেছেন, গত বছর ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই ছিল কিয়েভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা।
শনিবার ভোরের আগে হওয়ার এই হামলার সময় বিস্ফোরণে বাসিন্দারা জেগে উঠেন এবং ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গর্জন শহরজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়। কিয়েভের উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে এসব আক্রমণ চালানো হয়।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরানের তৈরি ৭৫টিরও বেশি শাহেদ ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলা চালায় রাশিয়া। তবে একটি ছাড়া বাকি সব ড্রোনই গুলি করে ভূপাতিত করা হয় বলেও দাবি করেছেন তারা।
এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন জেলেনস্কির কাছে একটি চিঠিতে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে শেয়ার করা ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের বন্দরগুলোর দ্রুত মেরামত এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য’ ৫০ মিলিয়ন ইউরোর ব্যবস্থা করবে ইউরোপীয় কমিশন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কিয়েভ তার অংশীদারদের কাছ থেকে নতুন সরবরাহ এবং নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষার ঘাটতি মেটাতে আশাবাদী। এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত, আমরা কী করছি এবং কোথায় করছি তা আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না, তবে অগ্রগতি আছে।’
ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম প্রধান শস্য রপ্তানিকারক দেশ। তবে শস্যচুক্তি থেকে রাশিয়া সরে যাওয়ার পর কৃষ্ণসাগরের একতরফা করিডোরের মাধ্যমে শস্য রপ্তানি করছে দেশটি। একাজে কৃষ্ণসাগরে বেসামরিক জাহাজ রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলারও শিকার হচ্ছে।
মূলত চলতি বছরের মাঝামাঝিতে নিজেদের শর্ত পূরণ না হওয়ায় কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। এক বছর আগে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
চুক্তির মাধ্যমে কৃষ্ণসাগর দিয়ে নির্বিঘ্নে আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে পারত ইউক্রেনের খাদ্যশস্য। তবে গত ১৭ জুলাই চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাশিয়া সেটির মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকৃতি জানায়।
যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বর্তমান বিশ্বের প্রধান শস্য রপ্তানিকারক দেশ।
বিবিসি বলছে, কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের বর্তমান শস্য রপ্তানির করিডোরগুলো ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের ওডেসার বন্দর থেকে শুরু হয়ে থাকে। জেলেনস্কি বলছেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে... আমরা সেগুলোই চাইছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠিক কবে থেকে এই অঞ্চলটিকে পাহারা দেওয়া শুরু করবে, সে বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যেই একটি উত্তর পেয়েছি। কারণ শস্য রপ্তানির এই করিডোর এবং এখানকার জনগণ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ।’
এনএইচ