দুর্নীতি ঢাকতে অযৌক্তিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার : ড. মাসুদ
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি জননেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের জনগণ যখন দিশেহারা, ঠিক সেই চরম দুঃসময়ে সরকার জ্বালানি তেলের দাম একলাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মানুষের জীবন পরিচালনার ব্যয়ভার লাগামহীনভাবে বাড়বে। দেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম একসাথে এতটা বাড়ানো হয়নি। মূলত সরকার তাদের দুর্নীতি ঢাকতেই সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে।
শনিবার রাজধানীতে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা প্রদানকালে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এক প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দেবে। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে, ফলে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে জাতীয় অর্থনীতি ওপর চাপ আরো বাড়বে। অন্যদিকে বেকারত্ব সমস্যা আরো প্রকট হবে। তাই অনতিবিলম্বে জ্বালানি তেলের এই বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানে নিম্নমুখী। এই সময়ে বাজার পর্যবেক্ষণ না করে কেবল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের জন্য সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অযৌক্তিক ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এটা জনগণের সাথে চরম উপহাস ছাড়া কিছু নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ চরম সংকটের মুখোমুখি। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে, জনগনের প্রতি তাদের কোনো দ্বায়বদ্ধতা নেই। সরকারের ব্যার্থতায় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আজ দুর্বিষহ। দেশের মানুষ এখনো করোনা মহামারীর আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তারা মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সর্বোপরি দেশের সার্বিক অর্থনীতি আজ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এই নৈরাজ্যকর অবস্থা চলতে পারে না। দেশের এই ক্রান্তিকালে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।
ড. মাসুদ আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের অধিকারের কথা বলে। রাজপথে সরকারের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে। ফলে এই ফ্যাসিস্ট সরকার জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
জুলুম নির্যাতন করে জামায়াতে ইসলামীর কণ্ঠরোধ করা যাবে না বলে তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, অবিলম্বে জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এটিএম আজহারুল ইসলাম, আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানাই।
একইসাথে জ্বালানি তেলের মুল্যবৃদ্ধিসহ সরকারের গৃহীত সকল অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় রাজপথে গণআন্দোলনের মাধ্যমে দেশের জনগণ এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য করবে বলে মনে করেন ড. মাসুদ। তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, হাফিজুর রহমান, আব্দুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোবারক হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি আরিফুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুল কাইউম মুরাদসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিভিন্ন থানা আমির ও সেক্রেটারিবৃন্দ।
এমআই