কারাবন্দি দুই নারী সাংবাদিককে মুক্তি দিয়েছে ইরান
Share on:
ইরানে মাশা আমিনির মৃত্যুর খবর প্রকাশ করার কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে দুই নারী সাংবাদিককে কারাবন্দি থাকতে হয়েছিল। অবশেষে তাদের দুজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল। খবর বিবিসির।
ইরানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিলুফার হামেদি (৩১) এবং এলাহেহ মোহাম্মদীকে (৩৬) জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ওই দুই সাংবাদিক তাদের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন এবং আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা জামিনে মুক্ত থাকবেন।
ওই দুই নারী সাংবাদিককে যথাক্রমে ১৩ ও ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই লাখ মার্কিন ডলার জামানতে তাদের জামিন হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তারা দেশত্যাগ করতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে।
দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটক হন মাশা আমিনি। পরে পুলিশ হেফাজতেই মারা যান তিনি। হিজাব পরিধানের কঠোর নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে গ্রেফার করা হয়েছিল।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ঠিকভাবে হিজাব না পরায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনি। ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কুর্দি বংশোদ্ভূত ওই তরুণী। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মাশা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে হিজাব-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সরকার-বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। বিক্ষোভ আন্দোলনে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার দাবি, হিজাব-বিরোধী এ আন্দোলনে ইরানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতায় কমপক্ষে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন।
ইরানের নৈতিকতা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ বা গাইডেন্স পেট্রোল নামে পরিচিত। দেশটির সাবেক কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের আমলে শালীনতা ও হিজাবের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে পুলিশের এ শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো টহল শুরু করে পুলিশের এ শাখা।
১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের চার বছর পর ইরানে হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশটিতে তৎকালীন মার্কিন-সমর্থিত সরকারকে উৎখাত ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই বিপ্লবের পর প্রথম হিজাব-বিরোধী এত বড় বিক্ষোভের মুখে পড়েছে ইরান সরকার। এতে চাপে পড়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও।
এনএইচ