tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:০৬ পিএম

রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শিক্ষা ব্যবস্থার সকল বৈষম্য দূর করা হবে : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান


Photo (05.10.24)-1

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূরা করা হবে।


স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা স্তরের সকল বিভাগের শিক্ষাকে জাতীকরণ করা প্রচেষ্টা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঘোষিত কুরআন ও হাদিস এই দুটি কিতাব অনুসরণ করলেই কেবল উন্নত জাতি গঠন সম্ভব।

শনিবার (০৫ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, চরিত্র ও শিক্ষা একসাথে না থাকলে শিক্ষার সুফল পাওয়া যায় না। একজন শিক্ষক যখন জাল সার্টিফিকেট লিখতে পারে, ভোট চুরিতে সহায়তা করতে পারে, ৫% ভোটকে ৬০% ভোট দেখাতে পারে তখন শিক্ষার কোন মান মর্যাদা থাকে না। নৈতিকতাহীন এই শিক্ষা দিয়ে জাতি গঠন করা যায় না। এটি জাতির জন্য চরম লজ্জার। শিক্ষিত ব্যক্তি যদি চরিত্রহীন হয় তবে সে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে যায় মন্তব্য করে মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের রচিত শিক্ষা নীতিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয় থাকলেও পরীক্ষা ছিল না। পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা ও জ্ঞানের মূল্যায়ন হয় কিন্তু আওয়ামী লীগ বলছে বিষয় থাকুক কিন্তু পরীক্ষা হবে না। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের তামাশা দেখতে দেখতে অসহ্য হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।

অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, শিক্ষা নীতি যদি এক ব্যক্তি বা এক দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য রচিত হয় তবে সেই শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হতে পারে না। জাতিকে ধ্বংস করতে পারে। আওয়ামী লীগের রচিত শিক্ষা নীতি মানুষের নীতি-নৈতিকতা নষ্ট করার শিক্ষা নীতি। এই শিক্ষা দিয়ে আদর্শ মানুষ গঠন করা সম্ভব নয়। আর আদর্শ মানুষ গঠন করতে না পারলে আদর্শ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা যাবে না। এই শিক্ষা ব্যবস্থা বহাল থাকলে নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন পূরণ হবে না। নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য কুরআন ও সুন্নহ অনুসারে শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

ড. মাসুদ আরো বলেন, ইসলাম ও আধুনিকতা একসঙ্গে চলে না। সমস্ত আধুনিকতা হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার অন্যতম মাধ্যম। হাসিনার শিক্ষা নীতিতে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আবু জাহেল সৃষ্টি করেছে। জামায়াতে ইসলামী আর কোন আবু জাহেল সৃষ্টি হোক চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্কুল-কলেজে, পাড়া-মহল্লা, ঘরে-ঘরে ওমর সৃষ্টি হোক। শেয়ার বাজার, ব্যাংক, বীমা যারা লুট করেছে তারা কেউই অশিক্ষিত নয়, তারা নৈতিকতাহীন, চরিত্রহীন অমানুষ। আওয়ামী লীগের আমলারা দুর্নীতি করতে করতে সীমাহীন পর্যায়ে চলে গেছে প্রশাসন দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সেই দুর্বল প্রশাসনকে দেশপ্রেমিক মানুষ সবল ও জনবান্ধব করে তুলতে কাজ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সকল শ্রেনীপেশার মানুষ সহযোগিতা করছে। জুলাই-আগস্টের চেতনা ধারন করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না বরং সফল হতে জামায়াতে ইসলামী সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও জানান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

তিনি আরো বলেন, বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার আদর্শ শিক্ষকদের হামলা-মামলা, জেল-জুলুম করে নানা রকমের নির্যাতন চালিয়েছে। তারা প্রথমে শিক্ষকদের দমিয়ে রাখার পথ অবলম্বন করেছে। তারপরে শিক্ষানীতি গঠন করেছে নিজেদের পোষা দলীয় শিক্ষক নামের চরিত্রহীন, নৈতিকতাহীন অমানুষদের দিয়ে। কারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারলেই আগামীর প্রজন্ম থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত কেউ থাকবে না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরাশক্তি ভারত আমাদের শাসন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই স্বপ্ন বাংলার মানুষ কখনো পূরন হতে দিবে না।

সেজন্যই ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের নেতৃত্ব আমরা দিতে পারি এবং দিবো। তোমরা ভারতে দালালেরা ভারতে চলে যাও। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী খুনি হাসিনা সহ যত গুলো ভারতে পালিয়ে গেছে এরা সবাই ভারতের গুপ্তচর দালাল ছিল। এদেরকে চিনে রাখতে এবং আগামী দিনের জন্য সজাগ থাকতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি অধ্যক্ষ নুর নবী মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি অধ্যক্ষ ইকবাল ভূইয়া সহ বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ নুর নবী মানিক বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে- শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয়করণ করে বিদ্যমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যসমূহ দূর করতে হবে, জাতীয়করণ করার আগ পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ১০০% বোনাস ৫০% বাড়ি ভাড়া ভাতা বিধি অনুযায়ী চিকিৎসা ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, বিগত ২০০৯ সাল থেকে বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারী যাদেরকে দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যায় ও অবৈধভাবে তাঁদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে, বিতাড়িত/বরখাস্তকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে বয়স জনিত কারণে অবসর গ্রহন করেছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণসহ সমুদয় পাওনা পরিশোধ করতে হবে, পতিত স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক গঠিত দুর্নীতিগ্রস্ত অবসর সুবিধাবোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কমিটি অবিলম্বে বাতিল করে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি পূণগঠন করতে হবে, বিতাড়িত স্বৈরাচারী সরকারের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ দলীয় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষা প্রশাসনের সকল স্তরে কর্মরত দলীয় ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এখনো পদত্যাগ করেনি অবিলম্বে তাদেরকে নির্বাহী আদেশে বহিষ্কার করতে হবে, বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের ৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর অটো সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া, পর্যায়ক্রমে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের চাকুরীর বয়স সীমা ৬৫ বছর করতে হবে, কিন্ডারগার্টেন ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সমন্বয় কমিটি অবিলম্বে পূনরায় গঠন করতে হবে।

প্রেসবিজ্ঞপ্তি//এমএইচ