tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
শিক্ষা প্রকাশনার সময়: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:১৯ পিএম

ছাত্রদল নেতা জিসানের ছত্রছায়ায় হেলাল-আশিকের চাঁদাবাজি


Untitled-4-20240919125122

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।


তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক নুরুদ্দিন আহমেদ জিসানের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিতুমীর কলেজের সমন্বয়ক হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুবল পাল জয়ের তথ্য অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম মো.হেলাল। তিনি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগীকে মারধর ও নিজ হাতে হেলাল টাকা নিয়েছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও হামলায় অংশ নেওয়া বাকিরা এক‌ই বিভাগ ও বর্ষের আশিক মাহমুদ ও তাদের অনুসারী বলে জানা গেছে।

জানা যায়, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক নূর‌উদ্দিন হোসাইন জিসান জয়ের পেছনে তাদের লেলিয়ে দেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জয় বলেন, সেদিন বিকেলে কলেজ উপাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তবে উপাধ্যক্ষের কক্ষে আগে থেকেই জায়েদ, জিসানসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিল। তারা উপাধ্যক্ষের রুম থেকে বেরিয়ে আমাকে দেখতে পেলে দূরে গিয়ে আমাকে দেখিয়ে নিজেদের ভেতর আলোচনা করে। এর কিছুক্ষণ পর উপাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার আগেই তাদের মধ্যে থেকে দুজন ছেলে আমার সাথে কথা আছে বলে, আমাকে ডেকে নিচে নিয়ে যায়।

জয় জানান, প্রথম অবস্থায় প্রায় ২০ মিনিট কথা বলার পর তাকে চলে যেতে বলে, ঠিক তখনই আরো প্রায় দশ জনের মতো ঘেরাও করে ফেলে এবং কলেজের দক্ষিণ পাশে নিয়ে যায়। সেখানে হেলাল, আশিকসহ অনেকেই ছিল। সেখানে তারা জয়কে 'কাওয়ালী সন্ধ্যার' নাম করে প্রথমে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে রাজি না হলে তারা জয়কে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে মারধর করে এবং টাকা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।

জয় বলেন, তারা হুমকি দেয় যে, আমি টাকা না দিলে আমাকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেবে এবং মামুন হত্যার মামলা দিয়ে দিবে। তখন আমি নিরুপায় হয়ে আমার এক বন্ধুকে কল দিয়ে ১০ হাজার টাকা এনে তাদেরকে দেই কিন্তু তারপরও তারা আমাকে ছাড়েনি এবং আরো টাকা দাবি করে। আমি তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরি কিন্তু তবুও তারা আমাকে ছাড়েনি। তখন আমার এক শিক্ষার্থীর বাবাকে কল দিয়ে বিকাশে ৬ হাজার টাকা আনি এবং তারা আমার মোবাইল নিয়ে গিয়ে বিকাশের দোকান থেকে ৬ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করে নিয়ে যায়।

জয় আরো বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি, মোবাইল নাম্বার রেখে দিয়েছে। বিভিন্ন অপরিচিত নাম্বার থেকেও কল করা হচ্ছে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই কলেজ প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন থাকবে, এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। যেন এই রকম ঘটনা আর কখনোই পুনরাবৃত্তি না হয় এবং সেই সাথে আমার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করছি।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত হেলাল বলেন, সুবল পাল জয়কে মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। তার কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেয়া হয়নি। এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এদিকে সুবল পাল জয়কে চেনেন না বলে জানান আরেক অভিযুক্ত আশিক মাহমুদ। দশ তারিখে ক্যাম্পাসে ছিলেন না বলেও জানান তিনি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার সময় অভিযুক্ত হেলাল ও আশিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে ফোন দেয়ার পরে আমি টাকা নিয়ে তিতুমীর কলেজে যাই। তারপর বেলায়েত চত্ত্বরে দেখি জয়কে ঘিরে রেখেছে। এরপর আমি জয়কে টাকা দিলে হেলাল নামের ছেলেটা জয়ের থেকে টাকা কেড়ে নেয়। আর হেলাল অনেক আক্রমণাত্মক ছিল। সাথে আশিক নামের ছেলেটাও ছিল। বাকিদের দেখলে চিনতে পারব। আর জয়ের বিকাশ থেকে তারাই টাকা তুলে নেয়।

এদিকে সুবল পাল জয়কে চেনেন না বলে জানান, ছাত্রদল নেতা জিসান। এছাড়া তার নেতৃত্বে সুবলকে মেরে ১৬ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, জিসান এ ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত। উপাধ্যক্ষের রুম থেকে বের হয়েই সুবলকে দেখে প্রাথমিকভাবে দুজনকে সুবলের সঙ্গে কথা বলতে পাঠায় জিসান। এর কিছুক্ষণ পর সেই দুজনের থেকে হেলাল, আশিকের দলের কাছে জয়কে হস্তান্তর করতে বলেন জিসান।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের তিতুমীর কলেজের প্রধান সমন্বয়ক নিরব হাসান সুজন বলেন, আমি অভিযোগটা শুনেছি তবে সেটা প্রমাণিত কিনা সেই বিষয়ে আমি অবগত নই। অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় যে সত্যিকার অর্থেই তারা অপরাধী, অবশ্যই আমি সেন্ট্রালকে সেটা অবগত করবো। আমরা কোন অপরাধীর পক্ষে কথা বলবো না, তেমনি কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অপরাধী বানানোর চেষ্টাও করবো না।

এ বিষয়ে জানতে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুর রহমান এমদাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদল প্রতিটা নেতাকর্মী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আদর্শে বিশ্বাসী। ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মী কোন প্রকার অসৎ উপায় অবলম্বন করতে পারে না। যদি করে থাকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মন্ডল বলেন, লোকমুখে কিছুটা শুনেছি। তবে পুরোপুরি অবগত ন‌ই। তবে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। সকল শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

এনএইচ