মেজর সিনহা হত্যা, দ্বিতীয় দিনের যুক্তি-তর্ক চলছে
Share on:
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় রাষ্ট্র এবং আসামি পক্ষের চলছে দ্বিতীয় দিনের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় রাষ্ট্র এবং আসামি পক্ষের চলছে দ্বিতীয় দিনের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক। প্রথম দিনের মতো আজ সোমবারও (১০ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টায় শুরু হয় দুপক্ষের এ কার্যক্রম।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রমের শেষ অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার (৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এ যুক্তি-তর্ক আগামী বুধবার পর্যন্ত টানা ৪ দিন চলবে।
রাষ্ট্রপক্ষে সোমবার যুক্তি-তর্কে পিপি ফরিদুল আলমের সাথে অংশ নিচ্ছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান।
প্রথম দিন মামলার আসামী বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিনের পক্ষেই যুক্তি-তর্ক শেষ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি পাবলিক প্রসিকিউর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজনভ্যানে মামলার ১৫ আসামিকে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
৪ দিনের যুক্তি-তর্ক শুরুর প্রথম দিনে রাষ্ট্রপক্ষে মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কর্মজীবনে পুলিশ বিভাগ থেকে যে পদক পেয়েছিলেন তা বাতিলের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন গ্রহণ করে এ বিষয়ে পরবর্তীতে আদেশ দিবেন বলে আশা করেন পিপি।
মামলার রায়ের বিষয়ে পিপি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি মতে মামলায় বিচারিক কার্যক্রমের শেষ ধাপ হচ্ছে উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক। এরপর রায় ঘোষণা।
তাই আশা করা যায়, আসামি পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীরা মামলা পরিচালনায় অহেতুক সময়ক্ষেপণ না করলে চলতি মাসের শেষের দিকে মামলার রায় ঘোষণা করতে পারেন আদালত।
গত ৭ ডিসেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিরা কেউ নিজে এবং কেউ আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিতভাবে নির্দোষ দাবি করে সাফাই সাক্ষী দেন আদালতে।
মামলার ১ ও ২ নম্বর আসামি টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ নিজেদের নির্দোষ দাবি করে নিজেরা সাফাই সাক্ষী দেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি।
মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন কক্সবাজারের র্যাব-১৫কে।
৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এরপর গত ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি 'পরিকল্পিত ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
এইচএন