অচলাবস্থার অবসান, নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পেল ইরাক
Share on:
অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেছে ইরাক। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ইরাকের পার্লামেন্ট কুর্দি রাজনীতিবিদ আবদুল লতিফ রশিদকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করে। পরে তাৎক্ষণিকভাবে মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করেন তিনি।
এতে করে গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে ইরাকে এক বছর ধরে চলে আসা অচলাবস্থার অবসান ঘটল। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরাকে প্রেসিডেন্টের পদটি ঐতিহ্যগতভাবে একজন কুর্দি রাজনীতিকের দখলেই থাকে এবং এটি বহুলাংশে একটি আনুষ্ঠানিক পদ। কিন্তু রশিদকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করা নতুন সরকার গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যে কাজটি রাজনীতিবিদরা গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর থেকে করতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, ৭৮ বছর বয়সী আবদুল লতিফ রশিদ ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ইরাকের পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। ব্রিটেনে পড়াশোনা করা এই প্রকৌশলী রাজনীতিক সাবেক প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই ইরানপন্থি জোটবদ্ধ দলগুলোর জোট সমন্বয় কাঠামো বলে পরিচিত ইরাকের বৃহত্তম সংসদীয় ব্লকের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান রশিদ। ৫২ বছর বয়সী সুদানি এর আগে ইরাকের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রীর পাশাপাশি শ্রম ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রেসিডেন্টের এই আমন্ত্রণের পর মন্ত্রিসভা গঠন এবং অনুমোদন পেতে পার্লামেন্টে উপস্থাপন করার জন্য সুদানির কাছে এখন ৩০ দিন সময় আছে।
বৃহস্পতিবারের ভোট ছিল চলতি বছর ইরাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চতুর্থ দফার প্রচেষ্টা। সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরাকের রাজধানী বাগদাদের গ্রীন জোনের আশপাশে বৃহস্পতিবার নয়টি রকেট আঘাত হানে এবং এই পরিস্থিতিতেই পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের এই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গত মাসে একই ধরনের হামলা হয়েছিল। সেসময় পার্লামেন্ট সদস্যরা স্পিকারকে বেছে নিতে ভোট দিচ্ছিলেন।
গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ইরাকের সর্বশেষ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পায় মোকতাদা আল-সদরের দল। কিন্তু তার দল সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত ইরাকে তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেসব প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
রাজনৈতিক এই অচলাবস্থার মধ্যেই গত আগস্টে পার্লামেন্ট থেকে দলের সকল সদস্যকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন সদর। এরপর কয়েক দফায় ইরাকের পার্লামেন্টে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সদরের সমর্থকরা জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে।
এরপর আগস্টের শেষ দিকে রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন মোকতাদা আল-সদর। এমনকি নিজের সকল রাজনৈতিক কার্যালয় ও সেগুলোর কার্যক্রমও বন্ধের ঘোষণা দেন তিনি। তার দাবি, তিনি কখনোই নেতৃত্ব এবং ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দাবিদার ছিলেন না। তাই চিরদিনের জন্য রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি।
অবশ্য নয় বছর আগেও একবার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন সদর। পরে আবারও তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসেন। তবে রাজনীতি ছাড়ার সর্বশেষ ঘোষণার পর রাজধানী বাগদাদজুড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়াদের ওপর বিশেষজ্ঞ হামদি মালিক বলছেন, ‘এখন ইরান-সমর্থিত দলগুলো পার্লামেন্টে আধিপত্য বিস্তার করছে, তাদের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ বিচারব্যবস্থা রয়েছে এবং তারা নির্বাহী বিভাগেও আধিপত্য বিস্তার করেছে... তাদের এটি থেকে উপকৃত হতে হবে।’
রয়টার্স বলছে, সাম্প্রদায়িক সংঘাত এড়ানোর জন্য ক্ষমতা ভাগাভাগি ব্যবস্থার অধীনে ইরাকের ক্ষমতা কাঠামো প্রতিষ্ঠিত। এই কাঠামোর অধীনে ইরাকের প্রেসিডেন্ট হন একজন কুর্দি, তার প্রধানমন্ত্রী হন একজন শিয়া এবং সংসদের স্পিকার হন সুন্নি।
এমআই