জুলুম-নির্যাতনের পথ পরিহার,নেতাদের মুক্তি চাইলেন জামায়াত আমির
Share on:
কারফিউ প্রত্যাহার,গণহত্যা বন্ধ, জুলুম-নির্যাতনের পথ পরিহার এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার এবং আন্তর্জাতিকভাবে ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান ।
সোমবার (২৯জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে আমির ডা.শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে সরকার দেশে গণহত্যা চালিয়ে এক রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। ছাত্রদের আন্দোলনটি কোনো অবস্থাতেই রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না। কোটা ইস্যুতে আন্দোলনকারী ছাত্র সমাজের প্রতি দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে।
দেশব্যাপী ছাত্রদের অরাজনৈতিক, শান্তিপূর্ণ সুশৃঙ্খল আন্দোলন যখন ব্যাপকতা লাভ করে সরকার তখন এই আন্দোলনকে দমানোর পদক্ষেপ নেয়। সরকারের উস্কানিমূলক ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য থেকেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। সেইসাথে পুলিশ গুলি চালায়। সৃষ্টি হয় গণহত্যার কালো অধ্যায়। দেশে ইন্টারনেট সেবা নেই। ব্যাংক, ব্যবসা-বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক যোগাযোগ এবং বিদেশগামীদের যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছেন।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার তাদের দলীয় ক্যাডার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ ও আওয়ামী লীগ এবং রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে গত কয়েক দিন যাবত দেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে, তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন সরকার প্রধান রাষ্ট্রযন্ত্র ও প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালাচ্ছেন ও গণ-গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করার জন্য সরকার বিদেশী কূটনীতিকদের মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছে। কূটনীতিকরা সরকারকে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন এবং কতজন লোক নিহত হয়েছে তার তথ্য জানতে চান। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
তিনি আরও বলেন,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৮ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিং-এ ১৪৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন বলে অবহিত করেন। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাস্তবে নিহতের সংখ্যা শতশত। আর আহতের সংখ্যা হাজার হাজার। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন পাঁচ শতাধিক লোক। এই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে সরকারের।
প্রকৃতপক্ষে স্বয়ং সরকার প্রধান গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। সেতুমন্ত্রী ছাত্রদের দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট মর্মে বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা করার জন্য ছাত্রলীগকে প্ররোচিত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আরেকবার যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর হামলা করারই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মীর কোনো ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। সরকারের উস্কানিমূলক বক্তব্যের শতশত প্রমাণ ও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।
সুতরাং চলমান গণহত্যার দায় সরকারের। মূলত সরকারের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের পরই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর হামলায় চালায়। তাদের ছোঁড়া গুলি, টিয়ারসেল, বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণের ফলে ব্যাপকহারে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আক্রমণ-হামলা শুরু করেছে সরকার ও তাদের দলীয় ক্যাডার বাহিনী।
এখন বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে বিরোধী দলকে নির্যাতনের পদক্ষেপ নেয়ার বাহানা খোঁজা হচ্ছে। দেশের জনগণ সরকারের এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেবে না। গণহত্যার জন্য একদিন বর্তমান ডামি সরকারকে জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিবেকবান মানুষ, জাতিসঙ্ঘ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান প্রতিবাদ জানিয়ে তার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিচার দাবি করেছেন। বিশ্বের ১৫০ জন বরেণ্য ব্যক্তি জাতিসঙ্ঘের নিকট গণহত্যার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।’
ডা.শফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চাইতে ক্রমেই জটিল করে তুলেছে। কারফিউ চলাকালে প্রথম ও দ্বিতীয় দিন অর্ধ-শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার খবর জাতীয় পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সমন্বয়কদের ধরে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদেরকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল ডিবি অফিসে তাদের খোঁজখবর নিতে গেলে ডিবি কর্মকর্তাবৃন্দ তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলেই তাদেরকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো ২৮ জুলাই রাতে সমন্বয়কদের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়।
বুঝতে কারো অসুবিধ হওয়ার কথা নয় যে, বলপ্রয়োগ করে তাদেরকে এ ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ছাত্রদের অন্যান্য সমন্বয়কগণ ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ২৯ জুলাই দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সরকারের বলপ্রয়োগের ভূমিকা ছাত্রদেরকে আরো প্রতিবাদী করে তুলছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে জুলুম-নির্যাতন ও গণগ্রেফতার চালিয়ে এবং রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির অবতারণা করেছে। দেশের বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ চলমান গণহত্যার জন্য সরকারের বাড়াবাড়িকে দায়ী করেছেন। তারা সরকারকে দমন-পীড়ন বন্ধ করে দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ সরকারের দায়-দায়িত্ব বিরোধী দলের ওপর চাপানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
যে সরকার নিজেই রক্তাক্ত ঘটনা সংঘটিত করে, গণহত্যা চালায় তাদের দ্বারা নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার সম্ভব নয়। তাই আমরা জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করে গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাদেরকে বিচারের মুখে সোপর্দ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, গ্রেফতার অভিযান ও বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপানোর মনোবৃত্তি পরিহার করে এবং ছাত্রদের দাবিসমূহ মেনে নিয়ে দেশে শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।’
ডা.শফিকুর রহমান বলেন, সরকারের জুলুম, নিপীড়ন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকল শ্রেণি, পেশা, রাজনৈতিক দলসমূহ ও দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সেইসাথে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. ছামিউল হক ফারুকী, সিলেট মহানগরী আমির জনাব ফখরুল ইসলামসহ সারাদেশে গ্রেফতারকৃত সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি