tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ০৭ মার্চ ২০২২, ০৮:১৯ এএম

আজ মহাকাব্যিক ৭ মার্চ


৭ মার্চ

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা গৌরবের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহতী কাব্যের কবি শোনান তার অমর কবিতাখানি। তার বজ কণ্ঠের নিনাদে বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণা, যার অঙ্গুলিহেলনে গর্জে উঠেছিল উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী স্লোগানের উদ্দামতায় বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সেদিন পতপত করে উড়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল-সবুজের পতাকা। উত্থিত হয়েছিল শপথের লাখো বজ মুষ্টি। তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তাল জনসমুদ্রে বজ কণ্ঠে হেঁকেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।


মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণ। স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রীত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করবো। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, আমি বলে দিতে চাই- আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না, এ আমার নির্দেশ।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সর্বশেষ দুটি বাক্য, যা পরবর্তীসময়ে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং সেদিনের সেই সভায় উপস্থিত তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার চশমাটা সেদিন ডায়াসের উপর রেখে ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পুরোটাই অলিখিত। একদিকে তিনি পাকিস্তানিদের প্রতি চারদফা শর্ত আরোপ করলেন, অন্যদিকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বললেন। ভাতে মারার কথা বললেন, পানিতে মারার কথা বলেন।’

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের আগে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। একজন তাকে বললেন, জনগণ কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া মানবে না। বঙ্গবন্ধু তাকে বললেন, তুমি তোমার কাজ কর। আমি তাদের নেতা, আমি তাদের পরিচালিত করবো, তারা আমাকে না।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরে ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের পর গোটা বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পরিবর্তে বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকে বিভিন্ন জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান শব্দ মুছে বাংলাদেশ লেখে।এ ভাষণের পর গোটা দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় চলতে থাকে। এ ভাষণ গুটি কয়েক রাজাকার ছাড়া গোটা বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।

রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু বাঙালি জাতিকে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান না। এটি সব জাতির মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিক-নির্দেশনা।

এদিকে, দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

এছাড়া বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন। আওয়ামী লীগের সব শাখা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণ করবে।

এমআই