tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অপরাধ প্রকাশনার সময়: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:৪৩ পিএম

পরকীয়া


পরকিয়া-বি. খন্দকার.png

পরকীয়ার পেছনে জড়ানোর একটি বড় কারণ হলো শূন্যতা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে। হয়তো স্বামী বা স্ত্রীর আর আগের মতো করে কথা বলে না বা আদর করে না। যত্ন কম নেয়। এই বিষয়গুলোর কারণে অন্যের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়।


মানুষ পরকীয়া করে কেনো ?

পরকীয়ার পেছনে জড়ানোর একটি বড় কারণ হলো শূন্যতা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে। হয়তো স্বামী বা স্ত্রীর আর আগের মতো করে কথা বলে না বা আদর করে না। যত্ন কম নেয়। এই বিষয়গুলোর কারণে অন্যের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে পরকীয়ার বিষয়টি চলে আসছে। উন্নয়ন ও মঙ্গলের কথা চিন্তা করে মানুষ একগামী। তবে মানুষ মূলত বহুগামী। পরকীয়াতে যেকোনো একজনকে বিবাহিত হতে হবে অথবা দুজনই বিবাহিত থাকতে পারেন। মানুষ কেন পরকীয়ায় জড়াচ্ছে তার কিছু কারণ গুলো দেখে নেওয়া যাক।

এক ধরনের প্রয়োজন বা চাহিদার কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় শারীরিক প্রয়োজন থাকে। আর্থিক প্রয়োজন থাকে। স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্যও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়। অনেক সময় মানসিক প্রয়োজন থাকে। আবার কিছু বিষয় শেয়ার করতে করতে অনেকে একসময় পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়।

অনেক সময় অনেকেই আবার নির্ভরতা থেকেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। আবার অনেক সময় অবস্থার কারণেও হয়তো পরকীয়ায় জড়ায়। হতে পারে একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেল। একপর্যায়ে হয়তো ভালো লেগে গেল। তখনও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

আবার দীর্ঘসময় একসঙ্গে কাটাতে কাটাতে, বন্ধুত্ব থেকেও অনেক সময় পরকীয়া হয়ে যায়। অনেকে শখ থেকেও পরকীয়ায় জড়ায়। অন্য আরেকটি শরীর কেমন, একে জানার একটি আগ্রহ থাকে। অনেকে আবার ভাবে, ‘ওরা কি সুখী! এই মানুষটির সঙ্গে থাকতে পারলে হয়তো আমার অনেক সুখ লাগত।’ এ থেকেও অনেকে ওই ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ অনুভব করে।

অনেক সময় মিডিয়াও পরকীয়ার প্রবণতা তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের পর্নোসাইট দেখে পরকীয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে পারে। আসলে অধিকাংশ মানুষেরই একটি বাড়তি চাহিদা থাকে।

তবে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মনীতির কারণে এ সম্পর্কে জড়ায় না। অনেকে কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য পরকীয়া করে। হয়তো আর্থিক সাহায্য পাবে এ সম্পর্কে জড়ালে, এমন ভাবনা থেকেও কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়। স্বামী-স্ত্রী দূরে থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে।

মেয়েদের বিয়ের আগে হয়তো যৌন চাহিদা তেমন থাকে না। বিয়ের পর তাঁরা বুঝতে পারে বিষয়টি। শুধু যৌনতায় অংশগ্রহণ নয়, কথাবার্তায়ও বিষয়টি থাকতে হয়। তখন যদি অন্য কেউ সেই কথাগুলো শোনায়, তাহলে তাঁর প্রতি আগ্রহ কাজ করে।

শারীরিক গঠন এ ব্যাপারে কাজ করতে পারে। কিছু কিছু ছেলে চিকন স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে। আবার কিছু কিছু ছেলে হয়তো একটু স্থূল স্বাস্থ্যের মেয়ে পছন্দ করে। সন্তান হওয়ার পর অনেক মেয়ে স্থূল হয়ে যায়। এতে স্ত্রীর প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।

আবার নারীর বেলায়ও অনেকে হয়তো খুব হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে, যা হয়তো তাঁর স্বামীর সঙ্গে মেলে না। আবার অনেকে মনে করেন, স্বামী বা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও খুব ভালো একজন বন্ধু অথবা বান্ধবী থাকতে পারে। যার সঙ্গে মানসিক শেয়ারিং ও শারীরিক সম্পর্ক—দুটো বিষয়ই থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়।

কারণ, বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনো প্রতিজ্ঞা নেই। যে কেউ যেকোনো সময় হয়তো এখান থেকে সরে আসতে পারে। একে অনেকে পরকীয়া বলে মনে করে না। আবার অনেকে বিবাহবিচ্ছেদের পর বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে চায় না। বিবাহিত কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের চাওয়াগুলো পূর্ণ করতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টিই এখানে মুখ্য হয়।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। সেক্স মানুষের একটি শরীরবৃত্তীয় চাহিদা। যদি স্বামী-স্ত্রীর যৌনজীবন দুর্বল হয়, তাহলে অপর ব্যক্তির প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে। কারো মধ্যে যদি ডিআরডিফোর জিনের উপস্থিতি বেশি হয়, তাঁদেরও পরকীয়া বা বাড়তি সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা থাকতে পারে।

অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ পরকীয়ায় জড়াতে পারে। যাঁদের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার আছে, তাঁদের পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। তাঁরা কোনো কিছুর মধ্যে স্থিরতা খুঁজে পায় না।

সঙ্গীর উদাসীনতা ও দূরত্বের কারণেও অনেক সময় মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী বাস্তবতার কারণে, কাজের কারণে হয়তো দূরে চলে যায়। তখন তাঁদের মধ্যে পরকীয়ার আগ্রহ বাড়ে।

পরকীয়া পরিবার সমাজ ধ্বংসের মূল কারণ:

প্রতিদিন দেশে বাড়ছে শুধু ডিভোর্সের সংখ্যা।শুধু রাজধানীতে স্বামী-স্ত্রীর কলহে প্রতি ঘণ্টায় একটিরও বেশি সংসার ভেঙে যাচ্ছে। মাসে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে ৮৪৩টিরও বেশি পরিবার। এর মধ্যে বিচ্ছেদে এগিয়ে রয়েছেন নারীরা।

ঢাকার তুলনায় অন্য বিভাগীয় অঞ্চল ও জেলাশহরগুলোতে নারী-পুরুষদের বিবাহ বিচ্ছেদের হার ও আশঙ্কা উভয়ই বেশি। হিসাব অনুযায়ী, তালাক নোটিশ প্রেরণকারীদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী। যার মধ্যে রাজধানী গুলশান ও বনানীর অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও বিত্তবান নারী থেকে শুরু করে কর্মজীবী নারীর সংখ্যাই বেশি।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের হিসেব মতে, তালাক চেয়ে নোটিশ জমা পড়েছে ৪ হাজার ২১৬টি। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে ২২ শ’ এবং দক্ষিণে ২০১৬টি। আবেদনকারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ আর নারীদের ৭০ শতাংশ। বর্তমান বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারীরা ঝুঁকিতে আছেন।

বর্তমানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রতি হাজারে ১০.৮ শতাংশ নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন।এর বিপরীতে প্রতি হাজারে ১.৫ শতাংশ পুরুষ বিচ্ছেদ করেছেন। আর বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের মধ্যে যারা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন তাদের সংখ্যা বেশি (হাজারে এক দশমিক ৭ জন)। আর অশিক্ষিতদের মধ্যে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৫।

অন্য দিকে গ্রামাঞ্চলে বিচ্ছেদের হার যেখানে হাজারে এক দশমিক ৩ শতাংশ আর শহরে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৮ জন। এক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আবেদন করছেন।

হিসাব অনুযায়ী, গ্রামের দম্পতিরা শহরের দম্পতিদের তুলনায় বিবাহ বিচ্ছেদে বেশি আগ্রহী। এর মধ্যে দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি রাজশাহী এলাকার মানুষ (প্রতি হাজারে ১.৭ শতাংশ হারে) বিচ্ছেদের আবেদন করেন।

এরপর বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে খুলনা (প্রতি হাজারে ১.৪ শতাংশ)। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিবাহ বিচ্ছেদের হার দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় কম (প্রতি হাজারে তা ০.৫ শতাংশ)। তথ্যানুযায়ী ২৫ থেকে শুরু করে ২৯ বছর বয়সী নারী-পুরুষরা সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন।

গবেষণামতে, যারা ২৭ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বিয়ে করেন তাদের দাম্পত্য জীবন তুলনামূলক বেশি টেকসই ও স্থায়ী হয়ে থাকে। অন্য দিকে যারা টিনএজ (১৩-১৯ বছর) বা ৩২+ বয়সে বিয়ে করে তাদের ডিভোর্সের হার বেশি। বিশেষ করে কম বয়সে বিবাহবন্ধনে যারা আবদ্ধ হয় তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ

পরকীয়া থেকে মুক্ত থাকার উপায়:

আমরা যদি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি তাহলে সুফল হিসেবে পরকিয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারি। এ ছাড়া পরকীয়ার ভয়ংকরী পরিণতি ও ধর্মের বিধান মেনে চলি তাহলে অবশ্যই আমরা নিজ থেকেই পরকীয়া নামক ভয়ঙ্কর সম্পর্ক থেকে দূরে থাকবো।

সর্বশেষ পরকীয়া নামক এই জঘন্য পাপ থেকে আল্লাহ আমাদের পরিবার সমাজ ও দেশকে হেফাজত করুক।

বি.খন্দকার.JPG

বি.খন্দকার

চেয়ারম্যান,

ইউনাইটেড গ্লোরি অফ বাংলাদেশ