tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আইন আদালত প্রকাশনার সময়: ০২ মে ২০২৪, ১১:৪৩ এএম

কৃষিজমি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা মানা হবে না


40f2c36aa860ff786cce409c498c5a5d-661e11b70c5b3-600x337

কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে গর্ত করে চাষাবাদের অনুপযোগী করা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারার অপরাধের মধ্যে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।


আদালত বলেছেন, এই মাটি ক্ষয় চক্রের হাত থেকে অসহায় কৃষকদের বাঁচাতে হবে। কৃষিজমি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে চাষাবাদের অনুপযোগী করার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের লিখিত আদেশে এসব মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন।

আদেশে বলা হয়েছে, মৃত্তিকা হলো মাটির উপরের স্তর যেখানে মাটির বেশিরভাগ জৈব পদার্থ, পুষ্টি এবং জীবন্ত অণুজীব ঘনীভূত হয়। এটি মাটির সবচেয়ে উর্বর স্তর, যেখানে গাছপালা বেড়ে ওঠে এবং যেখানে পৃথিবীর বেশিরভাগ জৈবিক মাটির কার্যকলাপ ঘটে। উপরের মাটি কাটা হলে মাটির জীবন দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে যে ওই এলাকার (সাতকানিয়ার) কিছু দুর্বৃত্ত অবৈধভাবে বা জোরপূর্বক প্রায় ৪০/৫০ ফুট গর্ত করে মাটি কাটছে এবং খনন করছে যার জন্য মালিকরা সেখানে জমি চাষ করতে পারছেন না। যা সেই এলাকার পরিবেশের পাশাপাশি জীব বৈচিত্র্যের ভারসাম্যেরও ক্ষতি করেছে। এ অবস্থায় এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, বিবাদীদের উচিত এই মাটি ক্ষয় চক্রের হাত থেকে অসহায় কৃষকদের বাঁচানো। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবকিছু জেনেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না। এখানে উল্লেখ্য যে জমিগুলো গর্ত করা হয়েছে সেই জমিগুলো ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইনের খুব কাছে যা উপরের মাটি কাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। এই ধরনের আচরণ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারার অধীনে অপরাধের মধ্যে পড়ে। এসব কারণে আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি।

  • তদন্ত কমিটি যে বিষয়গুলো তদন্ত করতে হবে

১. কীভাবে ওই অঞ্চলের কৃষি জমি সুরক্ষিত হবে তার সুপারিশ করতে হবে এবং ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করতে হবে।

২. চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় কৃষি জমির উপরের মাটি কাটার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা।

৩. প্রশাসন ও প্রয়োগকারী সংস্থার অবহেলা, স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা তদন্ত করা।

৪. ওই এলাকার কৃষি জমির উপরের মাটি কাটার কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা তুলে ধরা।

৫. ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ক্ষতির পরিমাণ কীভাবে নির্ধারণ করা যায়, তার সুপারিশ করা।

চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে মনোনীত করতে হবে। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার মনোনয়নের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদেশে বিবাদীদের সাতকানিয়ায় কৃষি জমির উপরের মাটি ভরাট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যা ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে, ৩০ দিনের মধ্যে বাইরে থেকে পলিমাটি তা ভরাট করতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার মধ্যে কতটি ইটভাটা রয়েছে এবং তাদের অবস্থা কী, তাদের পরিবেশগত ছাড়পত্র আছে কি না, তা জানাতে হবে আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে।

গত ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে চাষাবাদের অনুপযোগী করার ঘটনায় কারা দায়ী তা খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে সাতকানিয়ার যেসব কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কাটা হয়েছে, তা বাইরে থেকে পলিমাটি এনে ৩০ দিনের মধ্যে ভরাট করতে বলা হয়। চট্টগ্রামের ডিসি-এসপিকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। আদেশের সময় অনলাইনে আদালতে হাজির ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ওসি।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় ব্যাখ্যা জানতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ওসিকে অনলাইনে তলব করেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

এনএইচ