বিশ্বনবী সা: ছিলেন জীবন্ত কোরআন’
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, পবিত্র কালামে হাকীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল সা:-কে আমাদের জন্য সর্বোত্তম আর্দশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মূলত, বিশ্বনবী সা: ছিলেন জীবন্ত কোরআন। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য রাসূল সা:-এর আদর্শকেই যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য রাসূল সা: অনুসৃত নীতি সকলকে অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
সোমবার (২ অক্টোবর) রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত সিরাতুন্নবী সা: শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠান-২০২৩-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসার সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মো. মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান রহমান আযাদ এবং মাওলানা আব্দুল হালিম।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, পবিত্র কালামে পাকের সূরা আহযাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও ফেরেস্তাকুল নবী সা:-এর ওপর দরূদ পেশ করেন। হে ঈমানদারগণ তোমরাও তার প্রতি দরূদও সালাম পেশ করো’। কিন্তু আমরা তার ওপর মৌখিক ও গতানুগতিকভাবে দরূদ পেশ করলেও তার আদর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করি না। ফলে দরূদ পড়ার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। মূলত, যেদিন আমরা রাসূল সা:-এর আদর্শ বাস্তবজীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারবো সেদিন তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও দরূদ পড়ার হক আদায় করা হবে। তিনি দরূদের হক আদায়ে সকলকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, রাসূল সা: ছিলেন একজন কালজয়ী সমাজ সংস্কারক। তিনি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে যাযিরাতুল আরবের সকল তমাশা ভেদ করে মদীনায় একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি নবুয়াত প্রাপ্তির আগেই সমাজ সংস্কারের জন্য হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা করে পুরোপুরি সফল হয়েছিলেন। ইসলামী শক্তির দল গঠন ও ক্ষমতা অর্জনকে মহল বিশেষে সমালোচনা করা হলেও সংগঠন ও রাজনৈতিক শক্তি অর্জনের মাধ্যমে জালেমদের জুলুম মোকাবেলা করা সম্ভব। আর আল্লাহকে ভালবাসতে হলেও রাসূল সা: ও তার আদর্শকে যথাযথভাবে ভালবাসতে হবে। তিনি বিশ্বনবী সা:-এর আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে একদফায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, রাসূল সা: মাক্কী জীবন ছিল বেশ দীর্ঘ। এ সময় তিনি মানুষের ঘরে ঘরে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছেছেন। এতে তিনি নানাবিধ বাধা-প্রতিবন্ধতা ও জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হতোদ্দোম হননি। শুরুতেই তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী এসেছে। এতে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু খাদিজা (রা.)কে অভয়বাণী শুনিয়েছিলেন এবং তিনি তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফলের কাছে নিয়ে গেলে তিনি মোহাম্মদ সা:-কে শেষ নবী হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন। এরপর তার গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু হয়। যা ৩ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এরপর তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন। এতে তার ওপর জুলুম-নির্যাতন বেড়ে যায়। ফলে তিনি আল্লাহর নির্দেশে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। তাই বাতিলের রক্ষচুক্ষু উপেক্ষা করে দ্বীনে হক্বের দাওয়াত মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে।
তিনি দাওয়াতি কাজ সম্প্রসারণে রাসূল সা:-এর মাক্কী জীবনের অনুসৃত অনুসরণের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মাওলানা আবু তাহের মো: মা’ছুম বলেন, উসওয়ায়ে হাসানা রাসূল সা:-কে দেয়া আল্লাহ প্রদত্ত নাম। পবিত্র কালামে হাকীমের সূরা আল আহযাবের ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূল সা:-এর সর্বোত্তম আদর্শ। যাকে অনুসরণ করলে অন্তরে শান্ত্বনা পাওয়া যায়; যা জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করা যায়, যা সবসময় অনুসরণ যোগ্য তাই উসওয়ায়ে হাসানা। মূলত, যার ওপর নির্ভর ও ইক্তেদা করা যায় তিনিই তো মানব জাতির জন্য উত্তম আদর্শ। মহানবী সা: ছিলেন এই বিশ্ব জগতের এমনই এক আদর্শের মূর্ত প্রতীক। তাই জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তাকে উত্তম আদর্শ হিসাবে মেনে নিয়ে সকলকে আত্মগঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তিনি বিশ্বনবী সা: আদর্শ অনুসরণ করে সমাজ পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা পালনেন জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, রাসূল সা: মাদানী জীবন ছিল খুবই বৈপ্লবিক। এক নৈরাজ্যকর ও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রাসূল সা:-এর আগমন ঘটেছিল জাজিরাতুল আরবে। তখন ছিল পৌত্তিলকতাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা। চলতো জোর যার মুলুক তার নীতিতে। বৈষম্য, বেহায়াপনা মদ ও নারী ছিল সে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সে সমাজ ছিল অশান্তিপূর্ণ, পাশবিক ও মানুষের জন্য মর্যাদাহীন। রাসূল সা: মাদানী জীবনের স্বল্প পরিসরে মদীনায় একটি অবক্ষয় ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিলেন। মূলত, রাসূল সা: সর্বোত্তম আদর্শ। সর্বপরি তিনি ছিলেন উত্তম নৈতিককতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই রাসূল সা:-এর আদর্শ অনুসরণ করেই ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: ছিলেন আল্লাহর রাসূল ও শেষনবী। মূলত, বিশ্ববাসীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছিলেন। কালামে হাকীমের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তায়ারা মুহাম্মদ সা:-কে রাসূল হিসাবে উল্লেখ করেছে। তাকে প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ আল্লাহর আনুগত্য ও তাগুতকে অস্বীকার করার আহ্বান জানানো। তাই রাসূল সা: আদর্শ অনুসরণ করে মানুষকে আল্লাহ দিকে আহ্বান জানিয়েছে তাগুতের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শ অনুসরণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুর রহমান মূসা বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল স: বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ দুনিয়াতে পাঠিয়েছে। মূলত, তিনি দ্বীনে হক্বকে বিজয়ী করার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তাই আমাদেরকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূল সা:-এর আদর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। তিনি রাসূল সা: অনুসৃত নীতি অনুসরণে দ্বীনকে বিজয়ী করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা: ফখরুদ্দীন মানিক। আলোচনার মাঝে মাঝে ইসলামীক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন দেশসেরা শিল্পীবৃন্দ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি