tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩৫ এএম

প্রতিশোধ নেবেন না নওয়াজ, ‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংঘাতে সমৃদ্ধি আসবে না’


79675_nawaj

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ লাখো জনতার স্রোতে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছা নেই তার। সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সমর্থন চান তিনি। চার বছর লন্ডনে নির্বাসনে কাটিয়ে শনিবার তিনি দেশে ফেরেন।


প্রথমে রাজধানী ইসলামাবাদে অবতরণ করে আইনি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন। সেখান থেকে একই বিমানে ছুটে যান লাহোরে। সেখানে মিনারে পাকিস্তানে ঢল নেমেছিল লাখো সমর্থক, নেতাকর্মীর। উপস্থিত ছিলেন তারই ছোটভাই, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ ও ঘনিষ্ঠজনরা। নওয়াজ লাহোর পৌঁছালে সেখানে এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। শেহবাজ শরীফকে অশ্রু সংবরণ করতে দেখা যায়। পিতাকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেলেন মরিয়ম। নওয়াজের বুকে এ সময় মাথা রেখে পিতৃত্বের স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

এরপর মঞ্চে উঠে বক্তব্য শুরু করেন নওয়াজ শরীফ। তিনি বলেন, যদি প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুদ্ধের ভাব ধরে থাকে তাহলে পাকিস্তান সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। তিনি দেশকে দ্বিগুণ গতিতে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো তার আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) নির্বাচনী প্রচারণা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ।

এখন পর্যন্ত নিজে আদালতে অভিযুক্ত হওয়ায় সরকারি পদে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা পদে বসতে পারেন না। তা সত্ত্বেও তিনি মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দেন।

বলেন, প্রতিশোধ নেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। কিন্তু আমি দেশে কোনো দারিদ্র্য বা অশিক্ষা দেখতে চাই না। অনেক দিন পর আপনাদের সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করতে পারছি। কিন্তু আপনাদের জন্য আমার হৃদয়ে ভালবাসা ছিল অখণ্ড। কখনো আপনারা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, আমিও করিনি।

তিনি আরও বলেন, চার বছর পিছনে চলে গেছে। তাই বলে দেশের সেবা করার উৎসাহ তার মরে যায় নি। তিনি আরও বলেন, কিভাবে দেশের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হয় সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংঘাতের অধীনে আমরা উন্নতি করতে পারবো না। কাশ্মীর ইস্যু সমাধানে পাকিস্তানকে সামনে এগুতে হবে সদিচ্ছা ও কৌশলের সঙ্গে। শুরুতে তিনি জনগণের চোখে আনুগত্য দেখতে পেয়ে গর্বিত বলে বক্তব্য শুরু করেন।

বলেন, যখনই তাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তখনই আনুগত্যের সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন। পাকিস্তানের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছেন তিনি। যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে দ্বিধা করেননি কখনো। এ সময় তিনি নিজের বিরুদ্ধে, শেহবাজ শরীফ, মরিয়ম নওয়াজ ও পিএমএলএনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় অনুশোচনা প্রকাশ করেন।

পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর করার কথা স্মরণ করেন তিনি। বলেন, তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় দেশে লোডশেডিং শেষ করে দেয়া হয়েছিল। তবে কিছু ক্ষত কখনোই পূরণ হয় না বলে জোর দিয়ে উল্লেখ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, তার সারাজীবনের সম্পদ নিয়ে নেয়া হতে পারে। তা সত্ত্বেও তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় জনগণের কাছে ফিরে আসবেন। কিন্তু যাদেরকে তিনি হারিয়েছেন, তারা কখনো ফিরে আসবেন না। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের মা ও স্ত্রীকে হারানোর বেদনার দিকে ইঙ্গিত করেন।

তিনি বলেন, আগে যেমন তাকে বাসায় অভ্যর্থনা দিতে এসব নারী অপেক্ষা করতেন, এখন আর তারা নেই। এ সময় তিনি স্ত্রীকে হারানোর বেদনার কথা তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে তিনি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলের নির্মম কষ্টের কথা তুলে ধরেন।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন মেয়ে মরিয়মকে তার মায়ের মৃত্যুর কথা জানান তখন মরিয়ম অচেতন হয়ে পড়েছিলেন।

তিনি বলেন, আমি একজন সত্যিকার পাকিস্তানি। ১৯৯৮ সালের ২৮শে মে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও অন্য বিশ্বনেতারা তাকে এই পরীক্ষা থেকে বিরত থাকতে চাপ দিচ্ছিলেন। বিনিময়ে ৫০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানকে একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র বানাতে তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নাম উল্লেখ না করে নওয়াজ শরীফ বলেন, তিনি কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে প্রত্যাখ্যান করার সাহস দেখাতে পারেন?

নওয়াজ বলেন, তিনি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিলেন এবং ভারতের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নেতাদের বিষয়ে মন্তব্য করেন।

নওয়াজ শরীফ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি বোমা হামলার নিন্দা জানান। বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বর্বর ও নৃশংসতার নিন্দা জানাই। আল্লাহ যেন ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করেন। আমরা ফিলিস্তিন ইস্যু সমাধানের জন্য বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাই।

এনএইচ