tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২১ এএম

পিএইচডি ড্রপআউট, এখন শীর্ষধনী ইলন মাস্ক


elon-musk.jpg

মহাকাশের ঐ মঙ্গলগ্রহে মানববসতি গড়তে ইলন মাস্ক যখন আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন, তখন বর্তমান আবাসস্থল পৃথিবীতে তার ধনসম্পদ রীতিমতো আকাশ ছুঁয়েছে। আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মালিক হয়েছেন তিনি।


মহাকাশের ঐ মঙ্গলগ্রহে মানববসতি গড়তে ইলন মাস্ক যখন আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন, তখন বর্তমান আবাসস্থল পৃথিবীতে তার ধনসম্পদ রীতিমতো আকাশ ছুঁয়েছে। আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মালিক হয়েছেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা জিনিয়াস উদ্যোক্তা হিসেবে প্রায়ই ইলন মাস্কের নাম নেওয়া হয়। তিনি বেশ কয়েকবার বিশ্বের শীর্ষ ধনী নির্বাচিত হলেও সম্পদের ব্যবধানে আগে কখনোই এতটা ফারাক দেখা যায়নি।

ফোর্বসের হিসাবে, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে স্পেসএক্স এবং টেসলার প্রধান নির্বাহীর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৮০ কোটি ডলার। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষধনী জেফ বেজোসের সম্পদ এর চেয়ে অন্তত ১০ হাজার কোটি ডলার কম।

পুরো নাম ইলন রিভ মাস্ক। জন্ম-বেড়ে ওঠা দুটোই দক্ষিণ আফ্রিকায়। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর প্রথমদিকে বাবার কাছে থাকতেন। তখন থেকেই বইপোকা হয়ে ওঠা শুরু।

এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে শুরু করে কমিকস- সবই পড়তেন তিনি। স্কুলে বহুবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। সেই যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনায় মেতে ওঠেন। বাকিটা ইতিহাস।

ইলন মাস্কের জীবনী থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছু। কে জানে, হয়তো সেই শিক্ষাই আপনাকে কোনো একদিন মঙ্গলগ্রহে নিয়ে যেতে পারে।

ইলন মাস্ক থেকে শিক্ষা:

১) শেখার জন্য তীব্র ক্ষুধা
ইলন মাস্ক প্রথম ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন অর্থনীতিতে, এরপর পদার্থবিজ্ঞানে আরও একটি। তারপরেও জানার ক্ষুধা মেটেনি। শুধু বই পড়েই নিজেকে রকেট বিজ্ঞানে পারদর্শী করে তুলেছেন এই গুণধর উদ্যোক্তা।

ইলন মাস্কের এমন জ্ঞানের ক্ষুধা শুরু হয়েছিল ছোট বয়সেই। শিশুকালে নিজে নিজেই কোডিং শেখেন এবং নিজের বানানো প্রথম গেম ‘ব্লাস্টার’ বিক্রি করে ৫০০ ডলার আয়ও করেন।

নব্বইয়ের দশকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাতা আরও ভারী করার সুযোগ পেয়েছিলেন ইলন মাস্ক। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শক্তি পদার্থবিদ্যা/বস্তু বিজ্ঞানে পিএইচডি করতে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। তবে এর চেয়ে আরও ভালো সুযোগ দেখেছিলেন মাস্ক। মাত্র দুই দিনের মাথায় স্ট্যানফোর্ড ছেড়ে জিপ২ নিয়ে কাজ করা শুরু করেন তিনি। এই সফটওয়্যারটি পরে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

২) লক্ষ্যভেদী দূরদৃষ্টি
স্পেসএক্সে ইলন মাস্কের সফলতার রহস্য তার একটি ফোনকলেই স্পষ্ট। কলটি তিনি করেছিলেন একসময় নাসায় কাজ করা অ্যারোস্পেস কনসালট্যান্ট জিম ক্যান্ট্রেলের কাছে। এর পরেই মাস্কের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন ক্যান্ট্রেল।

সেদিন কী এমন বলেছিলেন মাস্ক, যে জিম ক্যান্ট্রেল একবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন? টেসলা সিইও’র ভাষ্য ছিল, ‘আমি ইলন মাস্ক। আমি একজন ইন্টারনেট বিলিয়নিয়ার। আমি পেপ্যাল ও এক্স ডটকম প্রতিষ্ঠা করেছি। এক্স ডটকমকে কমপ্যাকের কাছে বিক্রি করে আমি ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার পেয়েছি এবং বাকি জীবন সমুদ্রসৈকতে মাই তাই (বিভিন্ন ধরনের পানীয়র মিশ্রণ) পান করে কাটিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, টিকে থাকার জন্য মানুষকে বহু গ্রহবাসী প্রজাতি হতে হবে এবং আমার ধনসম্পদ কাজে লাগিয়ে দেখাতে চাই, মানুষ তা করতে পারে। তার জন্য আমার রাশিয়ান রকেট দরকার এবং সেজন্যই আমি আপনার কাছে কল করেছি।

৩) বেসিক থেকে শুরু
মাস্কের কথায়, আমি বিশ্লেষণের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের পদ্ধতি ব্যবহার করি। কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে প্রথম মূলনীতি বা মৌলিক সত্যটা বের করে আনুন, এরপর সেখান থেকে শুরু করুন।

৪) ‘না’ শুনে হতাশা নয়
মাস্ক একবার বলেছিলেন, হেনরি ফোর্ড যখন সস্তা, নির্ভরযোগ্য গাড়ি বানালেন, তখন মানুষ বলেছিল, ‘নাহ, ঘোড়াতে কী সমস্যা?’ ওই সময় তিনি বিশাল একটা বাজি ধরেছিলেন, আর তাতে কাজও হয়েছিল।

৫) বিশ্বাস রাখুন, হবে
মাস্কের সফলতার অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি তার সীমাহীন কল্পনাশক্তি, এরপর সেটিকে বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা। তার কথায় বললে, মাত্র কয়েকশ বছর পেছনে গেলেই আজ আমরা যা করছি, তা জাদু বলে মনে হবে। বহুদূর থেকে অন্যের সঙ্গে কথা বলা, ছবি পাঠানো, আকাশে ওড়া, বিপুল তথ্য আদান-প্রদান ঐশী ঘটনা মনে হবে। কয়েকশ বছর আগে এগুলোই জাদু বলে মনে করা হতো।

৬) ভুল হোক
শুরুতে সব ঠিকঠাক না চলার মানে আপনি ঠিক পথেই এগোচ্ছেন। এখানে ব্যর্থতা থাকবেই। যদি ভুল না হয়, তার মানে আপনি যথেষ্ট উদ্ভাবনী কিছু করছেন না।

৭) লক্ষ্য থাকুক অটুট
টেসলার শুরুর দিনগুলোতে যখনই কোনো সমস্যা হতো, দেখা যেতো- কাজ করতে করতে অফিসের ডেস্কেই ঘুমিয়ে পড়েছেন ইলন মাস্ক। যতক্ষণ সেই সমস্যার সমাধান না হতো, কোনো বিরতি নিতেন না প্রতিষ্ঠানটির সিইও। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১২০ ঘণ্টাও কাজ করেছেন ইলন মাস্ক। স্বাভাবিকভাবে অন্তত ৮০ ঘণ্টা কাজে থাকেন তিনি।

২০১৮ সালে এক টুইটে এ টেক জিনিয়াস বলেছিলেন, কাজ করার অনেক সহজ জায়গা রয়েছে। তবে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করে কেউ পৃথিবী বদলাতে পারেনি। অবশ্য কাজকে যদি ভালোবাসেন, তাহলে এটিকে আর কাজের মতো লাগবে না।

৮) পরিশ্রম, কঠিন পরিশ্রম
মাস্কের মতে, সফল হতে হলে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। তার ভাষ্য অনুসারে, আপনাকে সপ্তাহে অন্তত ৮০ থেকে ১০০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। এটি সফলতার বাধাগুলো দূর করবে। অন্যরা যদি সাপ্তাহিক ৪০ ঘণ্টা কাজ করে আর আপনি যদি ১০০ ঘণ্টা করেন, তাহলে একই কাজ করলেও ওরা যা এক বছরে অর্জন করবে, আপনি তা করবেন মাত্র চার মাসে।

৯) সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্য
৩০ হাজার কোটি ডলারের বেশি ধনসম্পদ থাকার পরেও ইলন মাস্ক বিলাসিতায় ডুবে যেতে চান না। বরং, এই অর্থ দিয়ে নতুন কী করা যায় তা খুঁজে বেড়ান। এমনকি, নিজের ধনসম্পদ যদি ভালো কাজে খরচ করতে না পারেন, তাহলে ধনী হিসেবে মারা যাওয়াকে ব্যর্থতা বলেই ধরে নেবেন তিনি। মাস্কের বিশ্বাস, তার অর্থসম্পদ একদিন মঙ্গলগ্রহে মানববসতি গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করবে।

১০) স্বপ্ন হোক বড়
ইলন মাস্কের কাছ থেকে যদি আর কিছু শিখতে না পারেন, তবু অন্তত স্বপ্ন দেখতে শেখা উচিত। বড় স্বপ্ন। এত বড় স্বপ্ন, যা আপনাকে দুনিয়ার বাইরে নিয়ে যেতে পারে।

টেক জিনিয়াসের মতে, আমরা এক গ্রহবাসী প্রজাতি হয়ে থাকতে চাই না। আমরা বহু গ্রহবাসী হতে চাই। মানুষ সবশেষ চাঁদে গেছে প্রায় অর্ধশতাব্দী হতে চললো। এটি অনেক সময়, আমাদের সেখানে ফিরে যেতে হবে এবং একটি স্থায়ী বেস (ঘাঁটি/বাসস্থান) তৈরি করতে হবে। আর তারপর মঙ্গলে গিয়ে পুরো শহর গড়তে হবে। আমি এগুলো হতে দেখতে পারি অথবা নিজেই এর অংশ হতে পারি। সূত্র: সিইও ম্যাগাজিন।

এইচএন