এ যেন চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের প্রতিচ্ছবি, পদধ্বনি : প্রিন্স
Share on:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, নিদারুণ কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ, অত্যন্ত মানবেতর অবস্থায় তারা দিন যাপন করছে। জীবন যাত্রার ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে নিত্যদিনের খাদ্য তালিকাসহ দৈনন্দিন ব্যবহারিক কাজের জিনিসও কাটছাট করছে। মাছ, গোশত, দুধ, ডিম খাওয়া এক প্রকার ভুলেই গেছে। চাল, ডাল, তেল, লবন, আলু, সবজি কিনতেই তারা দিশেহারা। কাজ হারিয়ে ঋণ করে জীবন চালাতে গিয়ে তারা মারাত্মক বিপদে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমে আসছে। এ যেন চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের প্রতিচ্ছবি, পদধ্বনি। অথচ সরকার নির্বিকার, মিথ্যা অহমিকা, মিথ্যাচার করে দেশের প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে চায়।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সমাবেশ সফল করার মধ্যদিয়ে জনগণ বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে জনগণ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
প্রিন্স বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলাবাজ, মামলাবাজ সরকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরের মতোই বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে, কোথাও কোথাও অঘোষিতভাবে পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে, গাড়ির রিজাভেশন বাতিলসহ যাত্রী পরিবহনের গাড়িতেও নেতাকর্মীদের আসতে দেয়া হয়নি। নেতাকর্মীরা কষ্ট করে পায়ে হেঁটে, ভ্যানে চড়ে, নৌকায় করে বা অন্য কোনো বিকল্প উপায়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচির দিনে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা সমাবেশ দিয়ে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে মহড়া দিয়ে অশান্তি, সংঘাত সৃষ্টি করে। এবারো তারা একই পথ অবলম্বন করেছে। বিভিন্ন জাগায় তারা মহড়া দিয়ে সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম হামলা করেছে, নেতাকর্মীদের আহত করেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে উল্টা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এমনকি ঘটনাস্থলে ছিলেন না, এমন অনেক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে আসার সময় কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার নেতাকর্মীদের ওপর কালীগঞ্জের বারোবাজার নামকস্থানে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকারীরা হামলা চালায়। নেতাকর্মীদের আহত করে। এদের অনেকের মাথা ফেটে গেছে, হাত-পা, আঙ্গুল, নাক ফেটে গেছে। সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাস, মাইক্রোবাস হামলা করে ভাংচুর করে।
বিএনপি নেতা বলেন, আমরা এই গ্রেফতার, দমন-নিপীড়ন, মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এসব বন্ধ করে গ্রেফতার নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে, হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। জনবিচ্ছিন্ন সরকার গণ-আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে এই নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। দমন-নিপীড়ন করে জনগণ এবং নেতাকর্মীদের ভয় দেখানো যাবে না। যারা সমাবেশ, পদযাত্রার মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ভয় পায়, তারা জনবিচ্ছিন্ন এবং আন্দোলনের ভয়ে ভীত। এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই, মাথার ওপর থেকেও ছায়া সরে যাচ্ছে। এজন্য তারা দমন-নিপীড়ন করে আন্দোলন দমনের পথ বেছে নিয়েছে।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রিন্স বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা, দমন করে আন্দোলন নস্যাৎ করার দিন শেষ। জনগণ আজ জেগে উঠেছে। এই সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। দূর্নীতি, লুট-পাট করে জনগণের অর্থ পাচার করে দেশ-বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। অন্যদিকে সর্বগ্রাসী সঙ্কটে জনগণ দিশেহারা। সরকার ও তার অনুগতদের দূর্নীতি, লুটপাটের কারণে বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। সরকার ও তার অনুগতদের দূর্নীতির মাতল দিতে হচ্ছে জনগণকে। জনগণের মারাত্মক দুর্দিনে তাদের পকেট কেটে নিজেদের দুর্নীতির ফলে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণ করছে সরকার। অন্যদিকে নিতা প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষের আয় সংকুচিত হয়ে গেছে। টিসিবিওএমএস-এর গাড়ির পেছনে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তসহ আয়বিহীন মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। সেখানেও সকলকে চাল দেয়া যাচ্ছে না। চাল না পেয়ে নিম্ন বুভুক্ষু মানুষ ট্রাকের ওপর পড়ে থাকা ছড়ানো ছিটানো চাল কুড়িয়ে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের এই মারাত্মক দুর্দিনে আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে সরকারকে দমন-নিপীড়ন করে আন্দোলন নসাৎ করার পথ পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছি। জনদূভোর্গ সৃষ্টিকারী, গণ-অগ্রহরণকারী সরকারকে দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে সংঘাত উস্কানির পথ পরিহার করে গণদাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ সুখম করার, জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্ত্বশীল সরকার, সংসদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাই। অন্যথায় গ্রাম, শহরের জনপদে অধিকার হারা, নিরন্ন বুভুক্ষু মানুষের যে পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে তাতে গণঅভ্যুত্থান অবশ্যম্ভাবী।
এমআই