গাজায় যুদ্ধের পর কী হবে, সিদ্ধান্তহীন ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা
Share on:
ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অভিযান শেষ হওয়ার পর গাজা ইস্যুতে ইসরায়েলের পরিকল্পনা কী হবে— সে সম্পর্কে এখনও কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্বই এই সিদ্ধানহীনতার প্রধান কারণ।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্ত যদিও সম্প্রতি বলেছেন যে গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই এবং বর্তমানে যে অভিযান চলছে, তার মূল লক্ষ্য উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করা, গাজাকে নিরস্ত্রিকরণ করা এবং এই উপত্যকা যেন ভবিষ্যতে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
কিন্তু ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতেমার বেন গেভির যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের পক্ষপাতী। ইতোমধ্যে তারা উভয়েই প্রকাশ্যে এই অবস্থান স্পষ্টও করেছেন।
তাদের এই অবস্থান স্পষ্টের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ইসরায়েলের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এ ইস্যুতে নেতানিয়াহুকে চাপ দেন। চলতি মাসে জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক আদালতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে মামলার শুনানিও শুরু হয়েছে।
কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, গাজা স্থায়ীভাবে দখল করার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই। দু’দিন আগে দেওয়া এক বার্তায় একই অবস্থান জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্তও।
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার একটি সূত্র তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে জানিয়েছে, স্মোতরিচ এবং বেন গেভিরসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এখনও গাজায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের প্রস্তাব থেকে সরে আসেননি এবং মন্ত্রিসভায় এ সম্পর্কিত বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এই দুই জন আবার নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ইসরায়েলের আদালতে দুর্নীতির মামলা চলছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। ইসরায়েলের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ গাজায় অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই ইসরায়েলে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে প্রচারাভিযান শুরু করেছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং বিদেশি নাগরিককে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত ১০০ দিনে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নীচে এখন ও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি।
গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছে।
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সূত্র জানিয়েছে, সার্বিক নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ব্যাপারটি বিবেচনায় নিয়েই মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো থেকে বিরত আছেন নেতানিয়াহু। আবার যুদ্ধপরবর্তী গাজা ইস্যুতে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটিও এড়িয়ে চলছেন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
এসএম