tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:০৫ পিএম

ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নিধনের আহ্বান, তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান


haridwar.jpg

সম্প্রতি ভারতের হরিদ্বারে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর ডাক দেয়ার কড়া নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির হিন্দুত্ববাদী উগ্র বেশ কিছু গ্রুপের নেতারা ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম জাতি নিধনের আহ্বান জানান তাদের অনুসারীদের।


সম্প্রতি ভারতের হরিদ্বারে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর ডাক দেয়ার কড়া নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির হিন্দুত্ববাদী উগ্র বেশ কিছু গ্রুপের নেতারা ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম জাতি নিধনের আহ্বান জানান তাদের অনুসারীদের।

তিনদিনের এক সমাবেশে হিন্দু নেতারা এর মধ্য দিয়ে ভারতে বসবাসকারী প্রায় ২০ কোটি মুসলিমকে টার্গেট করেছেন। তা নিয়ে ভারতের প্রায় সব মিডিয়াই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

এ খবর দিয়ে অনলাইন ডন লিখেছে, হিন্দু নেতাদের এমন আহ্বানের কড়া নিন্দা জানানো হয়েছে পাকিস্তান থেকে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অসীম ইফতিখার আহমেদ বলেছেন, এর প্রতিবাদ জানাতে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্সকে ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল।

তাকে বলা হয়েছে, ভারতের ভিতরে ওই ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্যের বিষয়ে পাকিস্তানের ‘সিরিয়াস উদ্বেগ’ যেন তিনি তার সরকারের কাছে পৌঁছে দেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, বিস্ময়ের সঙ্গে তারা লক্ষ্য করছে যে, হিন্দু রক্ষা সেনা’র প্রেসিডেন্ট প্রবোধ আনন্দ গিরি ও অন্য হিন্দু নেতারা জাতি নিধনের ডাক দিয়েছেন। এতে ভারত সরকার কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি।নিন্দাও জানায়নি অথবা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।

বিবৃতিতে ভারতের প্রতি বার্তা দেয়া হয় যে, ওই ঘৃণামূলক বক্তব্য পাকিস্তান ও সারাবিশ্বের নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে ভয়াবহ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

নিন্দনীয় বিষয় হলো সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে, বিশেষত মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত বক্তব্য এবং তাদের নিপীড়ন চলছে রাষ্ট্রীয় মদতে। এটা ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি বিজেপি-আরএসএসের সম্মিলনে গঠিত সরকারের একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে।

পাকিস্তানের মুখপাত্র আরো বলেন, ভারতীয় পক্ষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, হিন্দুত্ববাদী নেতাদের, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত সদস্যরা এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানী নয়া দিল্লিতে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার আগে।

আরো বলা হয়, সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিম ও তাদের উপাসনালয়ের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে ভারতে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি শাসিত কিছু রাজ্যে মুসলিম বিরোধী আইন করা হচ্ছে।

তুচ্ছ ঘটনায় হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সহিংসতা ঘটিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা দায়মুক্তি পাচ্ছে। কখনো কখনো এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মদত আছে।

এতে তাদের ইসলামভীতি আরো বেড়েছে বলে প্রকাশ পায়। এর মধ্য দিয়ে ভারতে মুসলিমদের পরিণতির ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে।

অসীম ইফতিখার আহমেদ আরও বলেছেন, সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারত যে ভয়াবহ ও পর্যায়ক্রমিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, তার জন্য ভারতকে জবাবদিহিতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায় পাকিস্তান।

পাশাপাশি আসন্ন গণহত্যার হাত থেকে তাদেরকে রক্ষার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানায় পাকিস্তান।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, আশা করা হয়, ওইসব ঘৃণামূলক বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে তদন্ত করবে ভারত সরকার।

তদন্ত করবে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিম ও তাদের উপাসনালয়ে ব্যাপক সহিংসতার বিষয়ে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেবে।

সংখ্যালঘু, তাদের উপাসনালয় এবং জীবনধারা নিরাপদ, নিরুদ্বিগ্ন এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানায় পাকিস্তান।
উল্লেখ্য, ভারতের উত্তরাখ-ের হরিদ্বারে ১৭ থেকে ১৯ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত তীর্থযাত্রা হয়। এর আয়োজন করেন হিন্দুত্ববাদী নেতা যাতি নরসিংহানন্দ। সেখানেই বেশ কিছু হিন্দু নেতা ওই ঘৃণামূলক বক্তব্য দেন।

এতে বেশ কয়েকবার সংখ্যালঘুদের হত্যা করার আহ্বান জানানো হয়। নরসিংহানন্দ বলেছেন, অর্থনৈতিকভাবে বর্জনে কাজ হবে না। হিন্দু গ্রুপগুলোকে নিজেদেরকেই আপডেট হতে হবে।

তরবারি শুধু মঞ্চেই ভাল দেখায়। এই যুদ্ধে তারাই জিতবে, যাদের কাছে উন্নততর অস্ত্র আছে।

হিন্দু রক্ষা সেনা’র প্রেসিডেন্ট স্বামী প্রবোধ আনন্দ গিরি বলেন, মিয়ানমারের মতো আমাদের পুলিশ, রাজনীতিক, সেনাবাহিনী এবং প্রতিটি হিন্দুকে অবশ্যই হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হবে এবং একটি ‘সাফারি অভিযান’ (জাতি নিধন) চালাতে হবে। আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।

হিন্দু মহাসভা নামে রাজনৈতিক দলের জেনারেল সেক্রেটারি সাধ্বী অন্নপূর্ণা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে গণহত্যা চালানোর উস্কানি দেন। তিনি বলেন, অস্ত্র ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। যদি আপনারা ‘তাদের’ জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে চান, তাহলে তাদেরকে হত্যা করুন। হত্যার জন্য প্রস্তুত হোন এবং জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হোন।

যদি আমাদের ১০০ জনও তাদের ২০ লাখকে হত্যা করতে প্রস্তুত হয়, তবুও আমরা বিজয়ী হবো এবং জেলে যাবো।

এইচএন