প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে ইসিতে চিঠি
Share on:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের দাবিতে এবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছেন প্রার্থীরা। হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তা শঙ্কর কথা উল্লেখ করে এ পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানানো হয়।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩ (প্রথম ধাপ) পরীক্ষার্থীদের পক্ষে’ মো. আশরাফুল ইসলাম নামে এক প্রার্থী এ আবেদন করেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আবেদনটি গ্রহণ করে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে উপস্থাপন করবেন বলে প্রার্থীদের জানানো হয়েছে।
আগামী ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রবেশপত্র ডাউনলোডও শুরু করেছেন প্রার্থীরা। পরীক্ষার মাত্র একদিন আগে তা স্থগিতের আবেদন করলেন প্রার্থীরা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর দেওয়া আবেদনে প্রার্থীরা উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩-এর প্রথম ধাপের পরীক্ষার্থী। আমাদের নিয়োগ পরীক্ষাটি আগামী ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের এ নিয়োগ পরীক্ষা রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মোট ৩ লাখ ৬০ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন।’
দেশের সবচেয়ে বড় এ নিয়োগ পরীক্ষায় অর্ধেকের বেশি পরীক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে নিজ জেলার বাইরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছেন। দেশে হরতাল ও অবরোধের কারণে বুধবার ও বৃহস্পতিবারে মধ্যে আমরা নিজ জেলায় যেতে পারছি না। এর সঙ্গে জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে। সেই সঙ্গে অনেকের প্রবেশপত্র ডাউনলোডের মেসেজ এখনো আসেনি।’
আবেদনে তারা আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর সব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের আয়ত্তাধীন থাকে। দেশের এ পরিস্থিতিতে যদি ৮ ডিসেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তবে আমরা অর্ধেকের বেশি পরীক্ষার্থী অবরোধের কারণে পরীক্ষা দিতে নিজ জেলাতে উপস্থিত হতে পারবো না। সার্বিক বিষয়টি দ্রুত বিবেচনা করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের পরীক্ষা স্থগিত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে আপনার (সিইসি) মর্জি হয়।
জানতে চাইলে ইসিতে আবেদন দেওয়া আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার আমাদের পরীক্ষা। ওইদিন ভোর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা অবরোধ চলবে। কিন্তু অনেক প্রার্থী পড়াশোনা বা চাকরির প্রস্তুতির জন্য বাইরের জেলায় বা ঢাকাতেও থাকেন। তাদের এ অবরোধের মধ্যে জেলার কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছাতে হবে। এটা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সাতটি ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সেটা কিন্তু স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও স্থগিত করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তাহলে প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা কেন স্থগিত করা হবে না? এটা তো সবচেয়ে বড় (প্রার্থী ও শূন্য পদের হিসাবে) নিয়োগ পরীক্ষা। আমাদের দাবি—ঝুঁকিপূর্ণ এ সময়ে পরীক্ষা স্থগিত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নেওয়া হোক।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘৮ তারিখে (ডিসেম্বর) পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারিত আছে। ওই তারিখ ধরে আমরা এগোচ্ছি। এখনও পরীক্ষা পেছানো বা স্থগিতের আর সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশন কিংবা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি।’
আগামী ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রবেশপত্র ডাউনলোডও শুরু করেছেন প্রার্থীরা। পরীক্ষা শুরুর মাত্র দুদিন আগে তা স্থগিতের আবেদন করা হলো।
সারাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর লাগাতার হরতাল-অবরোধে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছাতে সম্প্রতি দুই দফায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বরাবর লিখিত আবেদন করেন প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।
টানা এক সপ্তাহ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ও পরীক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পর অবশেষে গত ২৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে, দুই দফা পেছানোর পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম ধাপের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য ৮ ডিসেম্বর তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক গত ২ ডিসেম্বর থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করছেন প্রার্থীরা। প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের প্রার্থীরা নিজ নিজ জেলার কেন্দ্রে ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের পরীক্ষা গত ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ২৪ নভেম্বরের পরিবর্তে ১ ডিসেম্বর পরীক্ষা হবে। তবে ২১ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় তা পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলার ৫৩৫টি কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন।
এমএইচ