tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৫ পিএম

সরে যাচ্ছে আউয়াল কমিশন


-2edd628b88af6e42adfa9cade8f79638-e464d36ea8258cf95b827e962d29cde4

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করবেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।


দুপুর ১২টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই ‘সৌজন্য বিনিময়’ অনুষ্ঠিত হবে বলে ইসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল আলম জানিয়েছেন। গত কয়েক দিনের পদত্যাগের খবরের মধ্যে এ সৌজন্য বিনিময় অনুষ্ঠান থেকে বর্তমান কমিশনের সরে যাওয়ার ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসির একান্ত সচিব মো. রিয়াজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে এ সৌজন্য বিনিময়ে পুরো কমিশন উপস্থিত থাকবেন। স্যার সব বিষয় তুলে ধরবেন।’

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নির্বাচন কমিশন চুপ হয়ে যায়। গত এক মাস প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা অনিয়মিত অফিস করতে শুরু করেন। এর মধ্যে অবশ্য দুদিন তারা জরুরি সভা করেছে। তিনটি দলকে নিবন্ধনও দিয়েছে এ সময়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেরা আলোচনা করেছেন। জানা গেছে, সেখানেই তাদের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে গণমাধ্যম ডেকে পদত্যাগের কারণসহ সার্বিক বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হন।

বুধবার বিকালে নির্বাচন ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ‘পদত্যাগের’ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাল (বৃহস্পতিবার) জানাবো। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে সব কিছু জানানো হবে।’

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পার হচ্ছে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর)। ইতোমধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া আইন অঙ্গনের অনেকে পদত্যাগ করেছেন। পুলিশ, প্রশাসনসহ সবখানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সবশেষ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও পদত্যাগ করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের পদত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বারবার। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও পদত্যাগের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছিল বর্তমান কমিশন। জানা গেছে, প্রথমে রাষ্ট্রপতি সাক্ষাতের সময় দিলেও পরে তা বাতিল করা হয়।

এদিকে কোনও পক্ষের সাড়া না পেয়ে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ‘বিপ্লব ও ফরমান: সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামে কলাম লেখেন। ওই কলাম লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, আলোচনার জন্য কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। তাই নির্বাচন কমিশন যে ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়েছে, সেটা পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন মনে করছেন।

এখন বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ‘বিপ্লবের’ পর নির্বাচন কমিশন কীভাবে সংকটে পড়েছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন হয়তো অচিরেই বিগত হবে। কিন্তু এতে করে সংকটের নিরসন হবে না। সংসদ অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে ভেঙে দিতে হয়েছে।’

নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগসহ নির্বাচন কমিশন সংস্কারের দাবিতে ইসি সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ‘নাগরিক সমাজ’।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে তারা এই বিক্ষোভ করে ‘১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত নাগরিক সমাজে’-এর ব্যানারে বিভিন্ন স্লোগান দেয় একদল লোক। তবে মূল গেট বন্ধ করে দেওয়ায় ভেতরে ঢুকতে পারেননি বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের পাশাপাশি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম নুরুল হুদা ও রকিব উদ্দিন আহমেদের বিচার চাওয়া হয়।

হাবিবুল আউয়াল কমিশনের আড়াই বছর

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক আমলা হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন এই কমিশন। তাদের পরিচালনায় ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। এছাড়া এই আড়াই বছরে দেড় সহস্রাধিক পদে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন, উপনির্বাচন করেছে তারা।

২০২২ সালে নতুন কমিশন গঠনের আগে আকস্মিকভাবেই আইন প্রণয়ন হয়, আর সেই আইনের অধীনে প্রথম নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেন কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচ জন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের দাবি উঠেছে। সংস্কারের প্রতিশ্রুতির মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক চলছে।

দেশের অন্যতম প্রধান বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ইসিতে নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনকে মেনে নেয়নি। ইসির সংলাপের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছিল বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট। এই কমিশনের আমলে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্জন করে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র দলগুলো ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়া, বিতর্কিত বিভিন্ন সংস্থাকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অনুমোদন দেওয়া, আইনে নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দেওয়া, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মত পাল্টানোসহ কমিশনের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

এনএইচ