tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ০৪ জুন ২০২৪, ১১:৫০ এএম

কে আসবে ক্ষমতায়? নির্ধারণ করবে যে আট রাজ্যের ফলাফল


election-20240604114933

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪৪ দিন ধরে ৭ দফায় যে ৬৪ কোটিরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, সেই ভোটের চুড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে আজ।


এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত বিজেপি নেতৃত্বধীন রাজনৈতিক জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্সের (ইনডিয়া) মধ্যে। ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সবগুলোতেই হয়েছে ভোটগ্রহণ। তবে দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের ফলাফল বা জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে মূলত আটটি রাজ্যের ফলাফল। এই রাজ্যগুলো হলো—

পশ্চিমবঙ্গ

ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যটিতে লোকসভা আসন রয়েছে ৪২টি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩৪টিতেই জয়ী হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৯ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পায় ২২টি আসন। বাকি ১৯টি আসনে বিজেপি এবং একটি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস।

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই এগিয়ে যাওয়া অবশ্য ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটির জন্য খুব সহায়ক হয়নি। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির প্রধান সুকান্ত মজুমদারের দৃঢ় বিশ্বাস— এবার বিগত দুই লোকসভা নির্বাচনের চেয়েও রাজ্যে আসন বেশি পাবে বিজেপি। বুথফেরত জরিপ বলছে, রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ২৬টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিগত নির্বাচনের মতো এবারও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজনৈতিক জোট ইনডিয়ার ব্যাপরে ব্যাপকভাবে আশাবাদী।

মহারাষ্ট্র

গত ৫ বছরে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে যে ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, তা অন্য কোনো রাজ্যে দেখা যায়নি। এই রাজ্যে লোকসভার আসন রয়েছে ৪৮টি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের শীর্ষ রাজনৈতিক দল শিব সেনা ও বিজেপির মধ্যে জোট ছিল। সেই নির্বাচনে ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪১টিতে জয়ী হয়েছিল এই জোট।

তবে ২০২২ সালে শিব সেনায় মধ্যে ফাটল ধরে এবং দলটি দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একনাথ শিন্ডে এবং অপরাংশের নেতৃত্বে রয়েছেন মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বাল ঠাকরের ছেলে উদ্ভব ঠাকরে। একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিব সেনা বিজেপি জোটে রয়েছে, আর উদ্ভব ঠাকরের নেতৃত্বাদীন বিজেপি জোট করেছে মহারাষ্ট্রের বর্ষীয়ান নেতা শারদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপির সঙ্গে। এদিকে, এনসিপির একাংশ আবার শারদ পাওয়ারের ভাতিজা অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে দল থেকে বেরিয়ে বিজেপি-একনাথ জোটে যোগ দিয়েছে।

ফলে ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোটের যে হিসেব হয়েছিল, তা এবারের নির্বাচনে তেমন কাজ করবে না। ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্র দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এ নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আগের নির্বাচনের ফলাফল ধরে রাখা।

ওড়িশা

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় লোকসভা আসন রয়েছে ২১টি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এই ২১টি আসনের মধ্যে ১২টিতে জয়ী হয়েছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়েকের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল বিজু জনতা দল (বিজেডি)। বিজেপি জিতেছিল ৮ টি আসনে। তার আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি জয় পেয়েছিল মাত্র একটি আসনে।

প্রসঙ্গত, এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল বিজেডির; কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তা হয়নি।পশ্চিমবঙ্গের মতো ওড়িশাও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিজেপির কাছে। এবারের নির্বাচনের আগে রাজ্যটিতে বেশ কয়েকবার সফর করেছেন নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ।

বিহার

ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যেসব রাজ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেসবের তালিকায় বিহারের নাম বেশ ওপরের দিকে। পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে লোকসভার আসন রয়েছে ৪০টি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৯টি আসনে জয় পেয়েছিল। বিহারে এনডিএ জোটের দু’টি দল সক্রিয়—বিজেপি এবং জেডিইউ। জেডিইউয়ের প্রেসিডেন্ট নীতিশ কুমার বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী।

তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনের কয়েক মাস পরেই বিজেপি এবং জেডিইউয়ের মধ্যে ফাটল ধরে এবং এনডিএ জোট ছেড়ে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আরজেডি’র সঙ্গে জোট করেন নীতিশ কুমার। ২০২৩ সালে অবশ্য আরজেডিকে ত্যাগ করে ফের বিজেপি জোটে ফিরে এসেছেন তিনি।

এবারের নির্বাচনে বিহারে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের মূল নেতা নীতিশ কুমার। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের বৃহত্তম দল আরজেডির নেতৃত্বে রয়েছেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের ভাতিজা তেজস্বী যাদব। এছাড়া বিকাশশীল ইনসান পার্টি, সিপিআই, সিপিএম এবং ‍সিপিআই-এমএল।

এবারের নির্বাচনে নিজেদের হারানো আসনগুলো ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে আরজেডি এবং ইন্ডিয়া। নির্বাচনের সময় এবং তার আগে বিভিন্ন জনসভা ও প্রচার-প্রচারণায় একসঙ্গে ছিলেন তেজস্বী যাদব এবং রাহুল গান্ধী।

তেলেঙ্গানা

দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটিতে লোকসভা আসন রয়েছে ১৭টি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এই ১৭টি আসনের মধ্যে ৯টিতে জয়ী হয়েছিল তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেকর রাও’র নেতৃত্বাধীন ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। বাকি আসনগুলোর মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৪টিতে এবং কংগ্রেস ৪টিতে।

এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস ও বিজেপি উভয় দলের তেলেঙ্গানা শাখার নেতাদের মূল লক্ষ্য বিআরএসের আসনগুলো দখল করা।

এনএইচ