জুলাই গণহত্যার তথ্যানুসন্ধানে জাতিসংঘের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না সরকার
Share on:
কোটা সংস্কার থেকে শুরু করে সরকার পতনের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাগাতার কর্মসূচি চলাকালে জুলাই-আগস্টে হওয়া নৃশংসতা নিরূপণে ঢাকায় অবস্থান করছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।
তারা যেন নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে পারে, সেজন্য তাদের কোনও কাজে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনোরকম হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা জানান তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের যারা এসেছেন, তারা কাজ শুরু করেননি এখনও; শুরু করবেন। সপ্তাহখানেক ঢাকায় কাজ করবে এ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। তারা আসলে প্রচার এড়িয়ে চলতে চান। কাজ শেষ করার আগে কিছু বলতে চান না তারা। কাজের মাঝে কোনো কমেন্টস মাঝখানে আসুক, তারা তা চান না।
তিনি বলেন, আমরাও চাইছি, একটা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। আমরা হস্তক্ষেপ করবো না। তাদের কোনো সহযোগিতা লাগলে; মনে করেন কোনো এক জায়গায় গেলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, তাদের থাকার ব্যবস্থা করা, এরকম সব সাহায্য করতে আমরা রাজি আছি; এটুকু তাদের বলেছি।
তবে সরকারেরে সহযোগিতার বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলটি এখনও কিছু জানায়নি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সহযোগিতার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত তারা আমাদের কিছু বলেনি। তারা আসলে আগে থেকে কিছু বলবেও না। কোনো এক জায়গায় যাবে, তখন যাওয়ার জন্য যদি লজিস্টিকের প্রয়োজন হয় সেটা হয়তো চাইবে। কিন্তু তারা হয়তো নিজেরা পারবে বলে মনে করছে। প্রয়োজন হলে আমাদের সাহায্য চাইবে।
জুলাই-আগস্টে হওয়া নৃশংসতার তদন্তে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের পাঁচ সদস্য। আরও তিন সদস্য খুব শিগগিরই ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে চার সপ্তাহ অবস্থান করবে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। তদন্তের জন্য প্রয়োজনে আরও কয়েকদিন তারা থাকতে পারেন। তথ্যানুসন্ধান দলটি গত জুলাই ও আগস্টের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে। তবে, তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া হতে পারে।
জানা গেছে, যেসব জায়গায় বিক্ষোভ, অসন্তোষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেসব জায়গায় তদন্ত করতে যাবেন তথ্যানুসন্ধান দলের সদস্যরা। সাক্ষ্য গ্রহণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের কিছু এলাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ দেশের অন্তত আটটি বিভাগীয় ও জেলা শহর নির্বাচন করা হয়েছে।
তদন্তে যে ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে–মানবতাবিরোধী অপরাধ, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক ও বেসরকারি পক্ষগুলোর মাধ্যমে হত্যা ও নির্যাতন, জনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নামে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নিবর্তনমূলক আটক ও গ্রেপ্তার, গুম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি।
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর করেছিল। আট দিনের এ সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ছাত্র আন্দোলনের নেতা, বিক্ষোভ-সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রতিনিধি দলটি।
এমএইচ