সরকারের শেষ দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে: গণতন্ত্র মঞ্চ
Share on:
বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তারা বলছেন, এই সরকারের শেষ দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
নেতারা বলেন, আন্দোলন আসন্ন। নৌকা এবার ডুবন্ত, নৌকা ডুবছে। আর বিরোধী দল ভাসছে। বিরোধীদলের আন্দোলন সারাদেশে দেখা যায়। আগামী দিনে দুই-তিন রকমের কর্মসূচি দেবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
শুক্রবার (১২ মে) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন মঞ্চের নেতারা।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে সমাবেশ হয়। এতে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ক্ষমতায় রেখে বিরোধীদল কোনো নির্বাচনে যাবে না। বেশি খারাপ পরিণতি না চাইলে ক্ষমতা থেকে সরে যান। ডিসেম্বরের মধ্যে গায়ের জোরে নির্বাচন করবেন, এবার সেটা আমরা হতে দেবো না। হয় যাও, নয় নিদারুণ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকো।
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রসঙ্গে মান্না বলেন, প্রতিবার বিদেশ সফর শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, সংবাদ সম্মেলন করেন। এবার তো কিছুই করলেন না।
এরআগে বক্তব্যে এসে সাইফুল হক বলেন, গত ১৪ বছরে এত পাপ করেছেন, তা আপনাদের নৌকা আর সেই বোঝা বহন করতে পারবে না। বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েও নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন না। সিরাতুল মোস্তাকিমের পথে (সোজা পথ) হাঁটুন।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ফন্দি আঁটছেন আরেকটি তামাশার নির্বাচন করার। এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। মানুষ এখন রাজপথে নেমে এসেছে। এসব স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হবে না।
বিরোধীদলের প্রতি সাইফুল হক বলেন, আমরা যারা বিরোধীদলে আছি, যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, তীরে এসে যেন তরী না ডুবে। সব সংকীর্ণ চিন্তা পরিহার করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এসময় বিরোধীদলগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান সাইফুল হক।
গণঅধিকার পরিষদের মঞ্চ ত্যাগের বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, আমাদের মঞ্চ ছেড়ে গেছে একটি দল। তারা কেন চলে গেলো, জানি না। আন্দোলন যখন চলে তখন নানা ধরনের ঘাপটিবাজেরা, সুবিধাবাদীরা থাকে। আগামী কোরবানির ঈদে কোরবানির পশুর মতো ঘাপটিবাজদের কোরবানি হয়ে যাবে।
ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশ্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, মানুষের মন যদি বুঝেন, তাহলে আসন্ন গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে পারবেন না। যারা যারা মনে করছেন, ঘরে বসে থাকবেন, তাদের বলছি, মানুষ ঘরে-ঘরে গিয়ে ধাওয়া দেবে। সেজন্য প্রস্তুত থাকেন।
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাকি বলেন, আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন, মাঠে আপনাদের নামতেই হবে। দেশের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। মাত্র একটি পরিবারের স্বার্থরক্ষার জন্য তারা পুরো দেশকে বিভাজিত করে রেখেছেন।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে সাকি বলেন, এখনই আপোষের কথা আসছে, এখনও তো আন্দোলন শুরু করিনি।
চলমান এই আন্দোলন কেবলমাত্র ক্ষমতার পরিবর্তন নয় উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, বিএনপিসহ সব বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান থাকবে, কোনোভাবে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করবেন না। এদেশের গতিপথ নির্ধারিত হয়ে গেছে। এই সরকারের পদত্যাগ করতেই হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, সরকার যায়, সরকার আসে। গত ৫২ বছরে ১৭ বার ক্ষমতার বদল হয়েছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। গণতন্ত্র মঞ্চ জনগণের এই ভাগ্যবদলের সঙ্গী হওয়ার শপথ নিয়েছে। গণতন্ত্র উদ্ধার করে দেশে ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কার করা হবে। এই সংস্কারই জনগণের মূল্য লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ওয়াদা করছি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। যারা এই বিনাভোটের সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে, তাদের বিচার করা হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের তাসলিমা আকতার প্রমুখ।
এমআই