৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির রহস্য
Share on:
চাহিদা কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমছে, যদিও সেটা খুব সামান্য। তবে কিছু দোকানি কদিন ধরে ৬০০-৬৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। ক্রেতাদেরকেও হুমড়ি খেয়ে এ মাংস কিনতে দেখা গেছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজরের ইনসাফ মাংস বিতান মাইকিং করে ৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছিল। পিস করে রাখা মাংসগুলো স্তূপাকারে রাখা ছিল দোকানটিতে। মাইকে ক্রেতা ডাকতে ডাকতে বিক্রেতা বলছিলেন, এভাবে ৫ দিন চলবে মাংস বিক্রি।
কিছু ক্রেতা কিনছিলেন, আবার কিছু ক্রেতা অনেকটা উৎসুক মন নিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছিলেন। কারণ ঢাকায় এখন গরুর মাংস ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০-১৫ দিন আগেও যা বিক্রি হচ্ছিল ৭৮০-৮০০ টাকা কেজি দরে।
আমিনুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা জানালেন, এত কম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে দেখে দুই কেজি কিনলাম। তবে এত কম দামে কীভাবে বিক্রি হচ্ছে, তা বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করেও উত্তর পাইনি। বিক্রেতা শুধু জানালেন, সামনে যা আছে ইচ্ছা হলে নেন।'
রামপুরা বাজার থেকে কিছুটা এগিয়ে আবুল হোটেলের মোড়ের পাশে বড় মাংসের দোকান খলিল গোস্ত বিতান, যেখানে দিনে-রাতে সবসময়ই মাংস বিক্রি হয়। এখানেও ৬০০ টাকা কেজি দরে দু-তিনদিন ধরে মাংস বিক্রি হচ্ছে।
মাংসগুলোতে দেখা গেল হাড়, চর্বি ও মাথার হাড়গোড় মেশানো। জানতে চাইলে বিক্রেতা শফিকুল জানালেন, দাম কমানোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই একটু হাড় ও চর্বি বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেল, ৫৮০-৬০০ টাকায় মাংস বিক্রির শুরুটা হয়েছিল বংশালের একটি দোকান থেকে। এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর এই ধারণাটি অনেকেই অনুসরণ করা শুরু করে। এরপর মৌলভীবাজার, রামপুরা, আদাবর, খিলগাঁওসহ ঢাকার কিছু কিছু দোকানে কম দামে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে।
বিভিন্ন মাংসের দোকানি ও ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোকানিরা মাংসের সঙ্গে লেজ, মাথা, পা, ফ্যাপসা, চর্বি ও হাড়গোড় মিলিয়ে বিক্রি করছেন। ভুঁড়ি ছাড়া বাকি সব মাংস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তবে যারা মাংস ও হাড়ের নির্ধারিত পরিমাণ (পুরোনো পদ্ধতি) মিলিয়ে বিক্রি করছেন তারা ৭৫০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করছেন।
যেমন স্বপ্ন সুপার শপে যে মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২৫ টাকা কেজি দরে। সেখানে ঘোষণা দেওয়া রয়েছে ১ কেজি মাংসে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম হাড় থাকবে।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, '৭৫০ এবং ৬০০ দুটো দামেই গ্রাহক ঠকছেন। ৬০০ টাকায় মাংস যেটা বিক্রি হচ্ছে, সেখানে গ্রাহকের সঙ্গে চরম প্রতারণা করা হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের হারগোড়, চর্বি সবটাই অতিরিক্ত পরিমাণে দেয়া হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'এ খাতের কিছু সংস্কার করা গেলে ৫০০ টাকার কমে মাংস বিক্রির সুযোগ রয়েছে, যদিও সরকার সেদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না।'
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও সিটি কর্পোরেশন মিলে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে ৩২০ টাকা। কিন্তু পরের বছর সমিতির বিভিন্ন সংস্কারের পরামর্শ না শুনে সরকার দাম নির্ধারণ বন্ধ করে দেয়। এক বছরেই তখন মাংসের দাম ৫০০ টাকায় উঠে যায়। পরে ২০২০ সালে মাংসের দাম গিয়ে ঠেকে ৬০০ টাকায়; ২০২১-২২ সালে ৭০০ টাকা এবং ২০২৩ সাকে দাম হয় ৮০০ টাকা।
রবিউল আলম জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব। ব্যবসায়ীদের এখন কেউ মনিটরিং করছে না বলেই দাম এত বেড়েছে বলে তার অভিযোগ।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক মানুষই এখন মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় যখন ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে, তখন কিছু মানুষ মাংস কেনার চেষ্টা করছেন; বিশেষ করে যারা অনেকদিন মাংস কেনা থেকে বিরত রয়েছেন।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, এভাবে মাংস বিক্রি করে সাময়িক লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তারা ক্রেতা হারাবে।
'সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবাসয়ীদের আমরা জানিয়েছি, তারা যাতে ন্যায্যভাবে ক্রেতাদের মাংস সরবরাহ করেন। এতে মাংসের বিক্রি বাড়বে এবং খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা লাভবান হবেন।
এমএইচ