রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বমোড়লদের দায়িত্ব নিতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Share on:
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, তবে এ দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের একার নয়, বরং বিশ্বের মোড়ল হিসেবে পরিচিত দেশগুলোরও দায়িত্ব আছে।
ড. মোমেন বলেন, সত্তর থেকে নব্বই দশকেও রোহিঙ্গারা এ দেশে এসেছেন, তাদেরকে ফেরতও নিয়েছে মিয়ানমার। কারণ তখন বিশ্বমোড়লদের কার্যকর উদ্যোগ ছিল। সে সময় অথনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল মিয়ানমারের ওপর। তবে বর্তমানে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। সে কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সিলেট নগরীর ধোপাদিঘিরপাড়ে হাফিজ কমপ্লেক্সে আল খায়ের ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিতদের মানুষের মধ্যে হুইল চেয়ার ও সেলাই মেশিন বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা কদিন পর পর আমাদের দেশে আসেন। সত্তর দশকে আসছে, আশি ও নব্বইয়ের দশকে আসছেন। পরবর্তীতে মিয়ানমার সরকার তাদের নিয়েও গেছে, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে। এবারে সংখ্যাটা অনেক বেশি। একেবারে ১১ লাখ। তারা (মিয়ানমার) কিন্তু কখনোই বলে নাই, এদেরকে নেবে না।
আমরা তাদের বলেছি, তোমরা নিয়ে যাও। তারা বলছে, নেবে। আমরা বলেছি, এদের নিয়ে তোমরা নিরাপত্তা দেবে। তারা বলছে, দেবে। আমরা বলেছি, তোমাদের দেশে এরা যাতে স্বেচ্ছায় যেতে চায়, যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করো। বলছে, করবো। সবকিছুতেই রাজি।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত, পাঁচ বছর পার হয়েছে, একটাও লোক নেয় নাই। একটা রোহিঙ্গাও ফেরত যায় নাই। ওদের (মিয়ানমার) আন্তরিকতার অভাব। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, বিভিন্নভাবে চেষ্টা চলছে, দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক...আমরা এমনকি কোর্টেও গেছি।
ড. মোমেন বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এটা শুধু আমাদের একার দায়িত্ব না। বিশ্বমোড়লদেরও দায়িত্ব আছে। আমরা বিশ্বমোড়লদের বলেছি, আপনারা একটা কাজ করেন, রাখাইনে যেখানে রোহিঙ্গারা ছিলেন, সেখানে আপনারা নিরাপদ জোন তৈরি করুন। আপানারা চাইলে পারবেন। কিন্তু উনারা মুখে বলেন, কিন্তু সেই ধরনের আন্তরিকতার কিছুটা ঘাটতি আছে। তবে আমি সব সময় আশাবাদী যে, তারা তাদের দেশে ফেরত যাবেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা নতুন একটা প্রজেক্ট নিয়েছি। সব যদি নাও যেতে পারে, কিছু লোককে অন্য দেশে (পাঠানো)। আমাদের দেশ খুবই ঘনবসিতপূর্ণ, প্রতি বর্গ মাইলে প্রায় ২৯শ লোক থাকে। আর আমেরিকায় মাত্র ৪০ জন থাকে।
ইউরোপে মাত্র ১৫ থেকে ২৫ জন লোক থাকে। ওদের দেশটা অনেক বড়। পৃথিবীটা আল্লাহর তৈরি, সব মানুষের অধিকার আছে বাঁচার। তাই আমরা উনাদেরকে বলেছি, আপনারা কিছু লোক নিয়ে যান। কিছু লোক নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে এগুলো সমুদ্রের মধ্যে বিন্দুর মতো।
আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমার শুরু করেছে, এর সমাধানও তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মন্ত্রী সমালোচকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিবছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও সাহায্য করছে, তবে সবচেয়ে বেশি করছে বাংলাদেশ। তারপরও কিছু লোক সমালোচনা করে। তাদের নিজেদের কিছু করার মুরোদ নাই, কিন্তু খুঁত বের করায় ওস্তাদ।
সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এন