tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ১৫ মে ২০২৪, ১৫:৫৯ পিএম

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকিকে উড়িয়ে দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী


indias-foreign-minister-20240515153355

ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারিকে পাত্তা না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।


তিনি বলেছেন, যোগাযোগের সুবিধার্থে ইরানের কৌশলগত বন্দর প্রকল্পে কাজ করবে ভারতীয় কোম্পানি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রও অতীতে এই বন্দরের বৃহৎ সুবিধার বিষয়ে প্রশংসাও করেছিল।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারির বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন এস জয়শঙ্কর। ইরানের চাবাহার বন্দর পরিচালনার জন্য ভারত ১০ বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলছে, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বিষয়ে বিবেচনা করছে, এমন যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

পাকিস্তান লাগোয়া ইরানের সীমান্তের কাছের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ চাবাহার বন্দরের উন্নয়নের জন্য তেহরান-নয়াদিল্লির মাঝে ২০১৬ সালে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়। সোমবার এই বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য ইরানের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত।

তেহরানের সাথে নয়াদিল্লির এই চুক্তিকে ভালোভাবে নেয়নি ওয়াশিংটন। ভারতের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক থাকলেও ইরানের সাথে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে সম্প্রতি আরও অবনতি ঘটেছে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধরত ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রতি তেহরানের সমর্থন ঘিরে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারির বিষয়ে কথা বলেছেন এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বোঝাতে হবে যে এই প্রকল্প আসলে সবার উপকারে আসবে।’’

ভারতের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনি যদি অতীতের দিকে নজর রাখেন, তাহলে চাবাহার সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মনোভাব কেমন ছিল তা জানতে পারবেন।

এক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এই সত্য স্বীকার করেছে যে বৃহৎ পরিসরে চাবাহার বন্দরের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।’’

আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির সময় অনিচ্ছাসত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এই বন্দর প্রকল্পটিকে মেনে নিয়েছিল। কারণ ২০২১ সালে কাবুলে ক্ষমতাসীন সরকারের পতনে সমর্থন জানানোয় নয়াদিল্লিকে মূল্যবান অংশীদার হিসাবে দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

তবে মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্পে কাজ করা ভারতীয় কোম্পানিগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে এবং ওয়াশিংটন সেগুলোর প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, ‘যেকোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান— যারাই ইরানের সাথে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে; তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে যে, তারা নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ঝুঁকির মাঝে নিজেদেরই উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।’’

২০১৮ সালের শেষের দিকে ইরানের চাবাহার বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ভারত। বন্দরটি পাকিস্তানের স্থলপথ এড়িয়ে আফগানিস্তান এবং মধ্য-এশিয়ায় ভারতীয় পণ্য পরিবহন ও সরবরাহের একটি নতুন ট্রানজিট রুট খুলে দেয়। কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে আফগানিস্তানে ২৫ লাখ টন গম ও ২ হাজার টন ডাল পাঠানো হয়েছে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল) এবং ইরানের পোর্ট অ্যান্ড মেরিটাইম অর্গানাইজেশন চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বলে সোমবার ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী— চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে আইপিজিএল অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের পাশাপাশি আরও প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এর ফলে এই বন্দরে ভারতের মোট বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৩৭০ মিলিয়ন ডলারে।

২০১৯ সালে করোনা মহামারির আগে তেহরান সফর করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর। ওই সময় বন্দরের উন্নয়ন কাজের গতি বাড়াতে উভয় দেশই রাজি হয়। পাকিস্তান সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) পশ্চিমে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ইরানের চাবাহার বন্দর। ভারতের চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান চীনের সহায়তায় গোয়াদর বন্দরের উন্নয়ন করছে।

এমএইচ