ইতিহাসের এই দিনে: কাজী নজরুল ইসলাম’র প্রয়াণ
Share on:
আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স্রোতে এক সময় হয়ে উঠে ইতিহাস। পৃথিবীর বয়স যতোই বাড়ে ইতিহাস ততোই সমৃদ্ধ হয়। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনার প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরাচরিত। ইতিহাসের প্রতিটি দিন তাই ভীষণ গুরুত্ব পায় সকলের কাছে।
পাঠকদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সংযোজন করেছে নতুন আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিন’।
রোববার (২৭ আগস্ট), ১২ ভাদ্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১০ সফর ১৪৪৪ হিজরী। এক নজরে দেখে নিন ইতিহাসের এ দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
ঘটনাবলী:
১২২৭ - মুসলমানদের প্রথম নৌ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
১৭৮১ - পাল্লিলোরে হায়দার আলী ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে যুুদ্ধে লিপ্ত হন।
১৭৮৯ - ফরাসী জাতীয় পরিষদে বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার ঘোষণা।
১৮১৩ - ড্রেসডেনের যুদ্ধে নেপোলিয়ন অস্ট্রীয়দের পরাজিত করেন।
১৮৭০ - শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম শ্রমজীবী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৮৩ - ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা/জলোচ্ছ্বাসে ৩৬ হাজার প্রাণহানি ঘটে।
১৮৮৯ - প্রথম বারের মত সেলুলয়েড রোল ফিল্ম প্রস্তুত করা হয়।
১৯১৬ - অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রোমানিয়া।
১৯২৮ - প্যারিসে ১৭ টি দেশের যুদ্ধ পরিত্যাগ করার ঘোষণা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
১৯৩২ - আমস্টারডামে যুদ্ধবিরোধী শান্তি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৪২ - ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কংগ্রেসের গোপন বেতার কেন্দ্র কংগ্রেস রেডিও প্রচার শুরু করে।
১৯৫৮ - সোভিয়েত ইউনিয়ন ২ টি কুকুরসমেত স্পুটনিক-৩ উৎক্ষেপণ করে।
১৯৬৯ - ইসরায়েলের কমান্ডোরা মিসরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নীল উপত্যকায় মিসরীয় সেনাবাহিনীর সদর দফতরে মর্টার হামলা চালায়।
১৯৭১ - লন্ডনে বাংলাদেশ মিশন উদ্বোধন।
১৯৭৫ - বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ওমান।
১৯৮৮ - প্রবল বন্যায় বাংলাদেশে শতাধিক প্রাণহানি ঘটে।
১৯৯১ - সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত মোলদাভিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৯১ - ইউরোপিয়ান কমিউনিটি এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়াকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
জন্মদিন:
১৭৭০ - গেয়র্গ ভিলহেল্ম হেগল, জার্মান দার্শনিক।
১৮৪৭ - নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী, ভারতে ফুটবল খেলার জনক। (মৃ.১৯৪০)
১৯০৮ - স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান ,ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট তারকা। (মৃ.২৫/০২/২০০১)
১৯০৮ - লিন্ডন বি. জনসন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ তম রাষ্ট্রপতি।
১৯২৬ - ক্রিস্টেন নিগার্ড, নরওয়েজীয় গণিতবিদ, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা মুঘল ও রাজনীতিবিদ।
১৯৩১ - শ্রী চিন্ময়, বাঙালি মহাত্মা ও হিন্দুধর্মের সংস্কারক, লেখক, শিল্পী, কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ।
১৯৭৪ - মোহাম্মদ ইউসুফ, পাকিস্তানের ক্রিকেটার।
মৃত্যুবার্ষিকী:
১৯৬৫ - সুইস স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ লে করবুসিয়ের।
১৯৭৬ - বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। (জ.১৩০৬)
বিদ্রোহী কবি, বাঙালির কবি কাজী নজরুল ইসলাম আজ থেকে ৪৭ বছর আগে এ ধরার মায়া ছেড়েছেন। যে মানুষটা কোনো রুটিনের বাধায় বন্দি ছিলেন না। যখন যা ভালো লাগতো, তিনি তা-ই করতেন। দিন-রাত্রি ভুলে গিয়ে যেকোনো সময় হাজির হতেন কোনো বন্ধুর বাড়িতে। তারপর চলতো অবিরাম আড্ডা আর গান!
কোলাহলে কিংবা নিরবতায় তিনি গেয়েছেন -
বল বীর, বল বীর
বল উন্নত মম শির।
শির নেহারি আমারি নত শির
ওই শিখর হীমাদ্রির।
অথবা,
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল।
আজ রোববার (২৭ আগস্ট) ১২ই ভাদ্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মহান কবির দেহবাসন হলেও নজরুল রয়ে গেছেন আমাদের মনে। দুর্গম পথ চলতে গিয়ে পথিক যখন পথ হারিয়ে ফেলে, তখন পথ খুঁজে পেতে কি করতে হয়, সেটি দেখিয়েছেন নজরুল।
আমার পথ কীভাবে আমার মুক্তি নির্দেশ করবে, তা আমাদের জানিয়েছেন নজরুল। তিনি আমাদের হতে বলেছেন- উদ্দাম, চঞ্চল, নির্ভয়, স্বচ্ছল, বাধাহীন, বেদুঈন, স্বাধীন।
তাই তো নজরুল লিখেছেন-
মোরা আকাশের মত বাধাহীন
মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন,
বন্ধনহীন জন্ম স্বাধীন
চিত্তমুক্ত শতদল।
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা।
বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলাসংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। তার পিতা কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
কবিতা ও গানের মাধ্যমে প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে এ জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা প্রেরণার উৎস ছিল। সেই সাথে নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।
নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান যুগে যুগে মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
নজরুল ছিলেন চির প্রেমের কবি, যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন।
তিনি মূলত বিদ্রোহী। কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন- আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি দেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন তিনি।
১৯৭৬ - মুকেশ চন্দ মাথুর, ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত শিল্পী। (জ.২২/০৭/১৯২৩)
১৯৭৬ - মাউন্টব্যাটেন।
১৯৮২ - শ্রী আনন্দময়ী মা ,ভারতের বাঙালি হিন্দু আধ্যাত্মিক সাধিকা। (জ.৩০/০৪/১৮৯৭)
১৯৯০ - তপোবিজয় ঘোষ, বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিক। (জ.১৯৩৬)
২০০৬ - হৃষিকেশ মুখার্জী হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি পরিচালক। (জ.৩০/০৯/১৯২২)
দিবস:
রাযী দিবস (ইরান)
স্বাধীনতা দিবস (মলদোভা)
এন