সিইসিকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে: সুজন
Share on:
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবছে সংগঠনটির নেতারা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবছে সংগঠনটির নেতারা।
আজ শনিবার ( ২৯ জানুয়ারি) ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ তথ্য জানান।
এসময় নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে তারা বলেন, আজ হোক কাল হোক বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
ঠিক এমনই এক অপকৌশল ব্যবহারের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
গত বৃহস্পতিবার রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)-এর এক অনুষ্ঠানে কে এম নূরুল হুদা সুজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগসহ নানা সমালোচনা করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে এবং সিইসির বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ সুজন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একটি বিতর্কিত নির্বাচনের অকাট্য কিছু প্রমাণ ও তথ্য প্রকাশ করায় সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর কে এম নূরুল হুদার ক্ষিপ্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
তাছাড়াও গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার যে আবেদন করেন, তাতে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ সুজন-এর অনেক নেতৃবৃন্দ ছিলেন স্বাক্ষরকারী।
আর এ জন্যই সিইসি হুদার গাত্রদাহ এবং তার অপকর্ম ও পক্ষপাতদুষ্টতার কলঙ্ক আড়াল করতেই তিনি আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।
একারণেও কে এম নূরুল হুদা সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে আমাদের ধারণা।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের সাথে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনোদিন ছিলোও না। তিনি কমিশন থেকে কখনও কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না ।
অর্থাৎ ড. মজুমদারের বিরুদ্ধে, সিইসির নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কান কথার ভিত্তিতে উত্থাপিত, এক কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ এবং কাজ নিয়ে কাজ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই সিইসি হুদাকেই এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে।
একইসঙ্গে জবাব দিতে হবে: তার কাছে এ সম্পর্কে কোনোরূপ তথ্য থাকলে তিনি কেন তা প্রকাশ করলেন না? কেন অভিযোগটি তদন্ত করলেন না? দুর্নীতি দমন কমিশনেই বা কেন তা প্রেরণ করলেন না?
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, সিইসির অভিযোগের ভিত্তি হচ্ছে তার দপ্তরের ৭/৮ জন বদিউল আলম মজুমদারের বিষয়ে তাকে বলেছে।
এটা মিথ্যাবাদী বলার জন্য যথেষ্ট যা শুনে তা প্রচার করে বেড়ায়। এত বড় আসনে বসে তিনি এভাবে কথা বলবেন তা চিন্তা করতে পারিনি। তার উচিত ছিল অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
দুদকের কাছে পাঠানো। তিনি তা না করে তিনি বলে দিলেন, অনিয়ম পাওয়া গেছে। এটা মিথ্যাবাদীর সংজ্ঞায় পড়ে যায়। তিনি যে বদিউল আলম মজুমদারের সম্মানহানি করলেন, এটা হত্যার সমতুল্য। জাতীয় স্বার্থে এসব কিছুর প্রতিবাদ হওয়া দরকার।
সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সিইসির এমন আচরণে আশ্চর্য হই না। সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়ার সহজ পন্থা হলো ব্যক্তিগত আক্রমণ করা। বর্তমানে রাজনৈতিক বয়ানে এটি মুখ্য হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আমরা তা মেনে নেই।
কিন্তু সাংবিধানিক পদে থাকা একজন ব্যক্তির কাছে প্রত্যাশিত নয়। যত কিছুই হোক তিনি ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। আমরা এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনী ব্যবস্থা কীভাবে ধ্বংস হয়েছে তা দেখেছি। কিন্তু সিইসি প্রতিটি নির্বাচনে পরই বলেছেন, নির্বাচন ভাল হয়েছে।
এরকম অসম্ভব বক্তব্যই ছিল সিইসির ৫ বছরের অন্যতম প্রধান কাজ। নির্বাচন ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠানোর জন্য আমরা এই কমিশনের বিরুদ্ধে যে অসদাচরণের অভিযোগ করেছি- এজন্য আজ হোক কাল হোক বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশে নির্বাচন নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা কুসুমাস্তীর্ণ পথে হাঁটছেন না। দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্রর পথে ফিরিয়ে আনতে নাগরিক সমাজ, মিডিয়া ও আদালতকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে।
এই সংকটময় মুহূর্তে দেশে কথা বলার লোকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে মুষ্ঠিমেয় মানুষ ছিল তারাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
এভাবে চলতে পারে না। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সিইসি নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এরকম একজন খলনায়ককে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগে নতুন আইন করা হয়েছে আগের প্রজ্ঞাপনকে মোড়ক দেয়ার জন্য। এই ধরনের লোককে নির্বাচন কমিশনার বানানোর জন্য।
ড. মজুমদার তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ নতুন কিছু নয় উল্লেখ করে আরও বলেন, এর আগে আমার বাড়িতেও আক্রমণ হয়েছে। ওইদিন দরজা ভাঙতে পারলে কথা বলার সুযোগ পেতাম কিনা নিশ্চিত নয়। এটা নতুন কিছু না।
সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, ১০০ লোক মরার পরও নির্বাচন কমিশনের দায় নাই বলতে পারে যে লোক, তার বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নাই।
আমরা মানহানির মামলা করব কিনা চিন্তা করব। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থার তারা যে ক্ষতি করেছে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।
এইচএন