tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩১ পিএম

দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ শক্তি পর্যাপ্ত: মান্নান


image-118825-1702958350

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন যে দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ শক্তি ‘পর্যাপ্ত’ যা জাতিকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে চালিত করছে এবং দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে চালিত করছে।


গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে অর্জন ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে এক সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফলের প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এই দেড় দশকে অন্যান্য আর্থ-সামাজিক সূচকে ভালো অবস্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশ সকল প্রধান সামষ্টিক অর্থনৈতিক ফ্রন্টে ‘কোয়ান্টাম জাম্প’ দিয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন যে কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে এবং মানবজাতির জীবিকার ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটার আগে পর্যন্ত বাংলাদেশ গড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধির হার বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

২০১০ অর্থবছরে দেশের সামগ্রিক বাজেটের আকার ছিল ১,১৩,৮১৫ কোটি টাকা যেখানে এডিপির আকার ছিল ২৮,৫০০ কোটি টাকা। সময়ের সাথে সাথে এবং বিভিন্ন নীতিমালার সফল বাস্তবায়নের ফলে বর্তমান অর্থবছরে বাজেটের আকার ৭,৬১,৭৮৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যেখানে এডিপির আকার মোট ২,৬৩,০০০ কোটি টাকা।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার ধাক্কার মধ্যে দেশের সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ধকল কাটিয়ে অর্থনীতি এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই একটি সফল পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। চাল, শাকসবজি, মাছ ও মাংসের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ মসৃণ রয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে এটি অব্যাহত থাকবে।

প্রধান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো সম্পর্কে মান্নান বেশ উচ্ছ্বসিত। কেননা ডলার সংকটের মধ্যে সরকার আরও ডলার আনতে উদ্দীপনা প্রদানের কারণে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক সময় প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। বর্তমানে কিছুটা নি¤œ স্তরে থাকলেও এখনও বেশ কয়েক মাসের আমদানি বিল মেটাতে পারার সক্ষমতা রয়েছে। আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

মান্নান বলেন, সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহের কারণে গত মাসে সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং আগামী মাসগুলোতে ভোক্তা মূল্য সূচকও কমতে থাকবে।

তিনি এই মৌসুমে একটি শক্তিশালী বোরো ফসল ফলনের উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং যোগ করেন যে গত কয়েক মৌসুমে ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা, যেখানে সরকার সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মান্নান বলেন, গত ১৫ বছরে কাজের চাপ এবং ব্যয়ের পরিমাণ বহুগুণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্রমবর্ধমান প্রবণতার সাথে সাথে উন্নয়ন কাজের পরিমাণও বাড়ছে তাই সকল বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারী সংস্থাগুলো ছাড়াও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্টেকহোল্ডার, যেমন- ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীদের সুষ্ঠুভাবে কর্ম সম্পাদনে সময় লাগে যার জন্য প্রায়শই উন্নয়ন প্রকল্পের সফল সমাপ্তি দেখতে সময় লাগে।

তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়ন রাতারাতি ঘটতে পারে না এবং এতে সময় লাগে... বাস্তবায়ন সংস্থার বাস্তবায়ন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলছে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্থানীয়ভাবে অর্থায়নের প্রকল্প ছাড়াও সরকার বিদেশি সহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ক্ষমতা বাড়াতে আরও বড় পদক্ষেপ নেবে।

এগুলো ছাড়াও আরও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান কার্যক্রম এবং অটোমেশন উদ্যোগসমূহ অব্যাহত রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন মান্নান।

এ বিষয়ে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন যে সারাদেশে পর্যায়ক্রমে ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপনের চলমান কার্যক্রম ভ্যাট থেকে আরও রাজস্ব আয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে।

মান্নান বলেন, সর্বোত্তম মনিটরিং এবং মূল্যায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কভারেজ প্রসারিত করতে, আইএমইডির সক্ষমতা বছরের পর বছর ধরে জোরদার করা হয়েছে যদিও এটি দেশের বিশালতার তুলনায় সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকি করার জন্য যথেষ্ট নয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই সময়ের মধ্যে মানসম্মত তথ্য প্রকাশ নিশ্চিত করেছে বলেও উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিবিএসের সক্ষমতা আরও জোরদার হবে।

প্রবৃদ্ধির প্রবণতা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে বৈষম্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে মান্নান বলেন, যে ধরনের অর্থনৈতিক মডেল এখন দেশে বিরাজ করছে সেখানে বৈষম্য বিলুপ্ত হবে না, কারণ, দেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তবে, এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে মহামারী এবং যুদ্ধের ধাক্কা সত্ত্বেও এই সময়ের মধ্যে নি¤œ আয়ের গোষ্ঠীর মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং খরচ বেড়েছে।

এটি আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন যদিও সমাজে বৈষম্য এবং অসমতা কিছুটা হলেও থাকবে, তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষ অনেক এগিয়েছে।

দেশের মানুষ এখন ক্ষুধার্ত নয়, কারণ, আমরা অনেকাংশে ক্ষুধা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি.... সব শ্রেণীর মানুষ এখন মুরগি, ডিম, দুধের মতো প্রোটিন পেতে পারে। বৈষম্য এবং অসমতা দেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখানে যাদের উচ্চশিক্ষা এবং অর্থের সুযোগ রয়েছে তারা অবশ্যই জীবনে উজ্জ্বল হবেন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সমৃদ্ধ হবেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে, আমলা থেকে সফল রাজনীতিবিদ মান্নান দৃঢ়তার সাথে বলেন যে আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার নির্বাচিত হলে বিদ্যমান চাহিদা অনুযায়ী এলাকাগুলোর প্রতি প্রধান অগ্রাধিকার অব্যাহত থাকবে।

সবশেষে তিনি আগামী সাধারণ নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে ধ্বংসাত্মক কর্মকা-, অগ্নিসংযোগ থেকে বিরত থাকার এবং তাদের এভাবে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে আসার আহ্বান জানান।