হজের সময় মাথা মুণ্ডনের বিধান জানুন
Share on:
মাথার চুল মুণ্ডন বা চুল কাটা হজ ও ওমরাহর ওয়াজিব বিধান। কারণ, মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন ছাড়া ইহরামের নিষেধাজ্ঞাগুলো শেষ হয় না। ওমরাহতে মাথা মুন্ডন করতে হয় সায়ি করার পর মারওয়ায়, আর হজে কোরবানির পর মিনায়।
হজ ও ওমরাতে মাথা মুণ্ডন বা ছাঁটা— উভয়টির যেকোনো একটি করা যায়। তবে হজে মাথা মুণ্ডন করা উত্তম। কিন্তু তামাত্তু হজকারীদের পক্ষে ওমরার পর ছাঁটানই উত্তম, যাতে হজের পর মুণ্ডনের জন্য কিছু চুল বাকি থাকে। এভাবে হজের মৌসুমে মাথা মুণ্ডন বা ছাঁটান একটি বিশেষ ইবাদত। এটি পালন করা না হলে হজ বা ওমরাহ অনাদায়ী থেকে যাবে। তাই শরিয়তে হজ বা ওমরাহ পালনকালীন মাথা মুন্ডনকে ওয়াজিব করে দিয়েছে। তবে পুরুষের জন্য মাথা মুণ্ডন বা ছাঁটান উভয়টি জায়েজ, আর নারীর ক্ষেত্রে শুধু ছাঁটান জায়েজ। আর যার মাথায় চুল নেই সে শুধু ব্লেড বা চুল কাটার মেশিন পুরো মাথায় ঘুরিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট এবং তা ওয়াজিব। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৪৯)
হজে মাথার চুল মুণ্ডনের ফজিলত
হজ ও ওমরায় মাথা মুণ্ডনকে ছাঁটান অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। এমনকি মাথা মুণ্ডনকারীর জন্য বিশেষভাবে তিনবার দোয়া করা হয়েছে। তাই হাজীদের জন্য মাথা মুণ্ডনই উত্তম। নবীজি (সা.) স্বয়ং মাথা মুণ্ডনকে পছন্দ করতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ কর যারা মাথা মুণ্ডন করেছে তাদের প্রতি। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও? রাসুল বললেন, হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ কর যারা মাথা মুন্ডন করেছে তাদের প্রতি। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও? তৃতীয়বার রাসুল (সা.) বললেন, যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৫৪; মুসলিম, হাদিস : ৩২০৫)
অন্য হাদিসে আছে, ইয়াহইয়া ইবনে হুসাইন (রা.) তার দাদি থেকে বর্ণনা করেন যে, তার দাদি বলেন, ‘বিদায় হজে আমি নবী করিমকে (সা.) মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার দোয়া করতে শুনেছি, আর যারা ছাঁটিয়েছে তাদের জন্য শুধু একবার দোয়া করলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩২১০)
মাথা ডান দিক থেকে মুণ্ডন সুন্নত
মাথা মুণ্ডানোর ক্ষেত্রে শুধু মুণ্ডন করলেই সওয়াবের পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। এতে সুন্নত তরিকার অবলম্বন করতে হবে। ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান সুন্নত। তাই হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য উচিত ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান শুরু করা। এভাবেই নবী করিম (সা.) হজে স্বীয় মাথা মোবারক মুণ্ডন করতেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিনায় পৌঁছে প্রথমে জামরাতে গেলেন এবং তাতে কঙ্কর মারলেন। অতঃপর মিনায় অবস্থিত তার ডেরায় গেলেন এবং কোরবানির পশুগুলো জবেহ করলেন, তৎপর নাপিত ডাকলেন এবং তাকে আপন মাথার ডান দিক বাড়িয়ে দিলেন। সে তা মুণ্ডন করল। তিনি আবু তালহা আনসারিকে ডেকে কেশগুচ্ছ দিলেন। অতঃপর নাপিতকে মাথার বাম দিক বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, মুণ্ডাও; সে মুণ্ডাল। আর তিনি তা সেই আবু তালহাকে দিয়ে বললেন, যাও মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দাও।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩২১৫)
মাথার চুল ছাঁটানোর গুরুত্ব
হজ ও ওমরাহর মধ্যে মাথার চুল মুণ্ডান বা কর্তন উভয়টি জায়েজ আছে। এর যেকোনো একটির মাধ্যমে ইহরামের নিষেধাজ্ঞাসমূহ শেষ হয়ে যায়। তবে নবী করিম (সা.) কখনও কখনও মাথার চুল কাটার মাধ্যমে হালাল হয়েছেন। তাই হজ বা ওমরাহ পালনকারীরা মাথার চুল ছাঁটানোর মাধ্যমেও ইহরাম খুলে ফেলতে পারবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ও তার কতিপয় সাহাবি বিদায় হজে মাথা মুণ্ডন করেছিলেন, আর কেউ কেউ কর্তন করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৪৫৫)
হাদিসে আরও আছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমাকে আমিরে মুয়াবিয়া (রা.) বলেছেন, আমি কাঁচি দ্বারা নবী করিম (সা.)-এর মাথা ছাঁটিয়ে ছিলাম মারওয়ার নিকটে। (মুসলিম, হাদিস : ৩০৮১)
স্ত্রী লোকের জন্য শুধু মাথার চুল ছাঁটান জায়েজ
ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা উভয়টি জায়েজ। কিন্তু হজ বা ওমরা পালনকারী নারীর ক্ষেত্রে শুধু মাথার চুল কর্তন জায়েজ, মুণ্ডন জায়েজ নেই। নবী করিম (সা.) হজ বা ওমরা পালনাবস্থায় নারীদের জন্য মাথার চুল মুণ্ডকে নিষেধ করেছেন। তাই নারী হাজীরা শুধু মাথার চুল কর্তন করে ইহরাম খুলে ফেলবেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্ত্রীলোকের প্রতি মাথা মুণ্ডন নেই। স্ত্রীলোকের প্রতি রয়েছে মাথা ছাঁটান।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৯৮৬)
এমআই