জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও কমাল আইএমএফ
Share on:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের সভায় আজ বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড়ের প্রস্তাব উঠছে। সবকিছু ঠিক থাকলে পর্ষদে অনুমোদনের পর চলতি মাসের শেষ নাগাদ তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়া যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বরভিত্তিক শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসে আইএমএফ মিশন। সংস্থাটির ডেভেলপমেন্ট মাইক্রো ইকোনমিকস ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক ও পর্যালোচনা কার্যক্রম শেষে গত ৮ মে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ সরকার এবং আইএমএফ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এ কারণে আজকের সভায় তৃতীয় কিস্তি অনুমোদনের বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির পরিমাণ হবে ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) ও এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ২২ কোটি ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এর পর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কঠিন শর্তের বাস্তাবয়ন ও আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।
এ ঋণের একটি অংশ জলবায়ু তহবিলের, যা বাংলাদেশকেই প্রথম দেওয়া হয়েছে। তাই এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকুক, তা চায় আইএমএফ। এ জন্য বাংলাদেশের অনুরোধে চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুন শেষে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সরকারের অনুরোধে আইএমএফ পরে সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বা ৪৮ বিলিয়ন। এখন এ রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নিচে রয়েছে। তবে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত প্রায় ২৬ কোটি ডলার বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ জুন রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৫২ কোটি ডলার। গত বুধবার তা ২৬ কোটি ডলার বেড়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ বেড়েছে ৩১ কোটি ৮২ লাখ ডলার। চলতি মাসের শুরুতে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৮৭২ কোটি ডলার। গত ১২ জুন বেড়ে হয় ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। গত বুধবার ১ হাজার ৯৫২ কোটি ৭৯ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে আইএমএফের নিট হিসাবে এ রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের নিচে। ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, তা জুন শেষে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া গেলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়বে।
এনএইচ