বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এস আলমের বিলাসবহুল ১৪ গাড়ি সরানোর অভিযোগ
Share on:
চট্টগ্রামের নগরের একটি ওয়্যারহাউস থেকে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের ব্যবহৃত ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের তদারকিতে এসব গাড়ি সরানো হয়েছে। গাড়িগুলোতে কী ছিল তা জানা যায়নি। অনেকের ধারণা, এসব গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা ছিল। তবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে এস আলম গ্রুপের টাকা লুটপাট নিয়ে সমালোচনা চলছে। এমন সময় গ্রুপটির ত্রাণকর্তার ভূমিকায় বিএনপি নেতাদের দেখে চট্টগ্রামে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি ২৯ আগস্ট দিবাগত রাতে। ওইসময় চালকদের একটি টিম কালুরঘাট শিল্প এলাকার মীর গ্রুপের মালিকানাধীন ওয়্যারহাউসে আসেন। তাদের ব্যাকআপ দিতে কয়েকটি গাড়ি সেখানে পৌঁছায়। গাড়িগুলো থেকে নামেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন। একটি গাড়ি থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের চালক মনসুর। সেই গাড়ির ভেতরে আবু সুফিয়ান বসে ছিলেন বলে ধারণা প্রত্যক্ষদর্শীদের।
বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি ও তদারকিতে একে একে বের করা হয় বিলাসবহুল ১৪টি গাড়ি। এর আগে গাড়িগুলো ছিল চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিক এলাকায়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেখান থেকে কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক এলাকায় এস আলমের মালিকানাধীন একটি ওয়্যারহাউসে গাড়িগুলো রাখা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও মীর গ্রুপের মালিক আবদুস সালাম সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। আবার আবদুস সালাম সম্পর্কে সাইফুল আলম মাসুদের বেয়াই।
ঘটনার বিষয়ে বিএনপি নেতা এনামুল হক বলেন, সালাম ভাইয়ের কাছ থেকে বিএনপির লোক চাঁদা দাবি করেছে শুনে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে সুফিয়ান ভাইও ছিল। গাড়িগুলোর মালিক কে আমি জানি না। আমি শুধু সালাম ভাইকে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলাম। এস আলমের মাসুদ ও সালাম ভাই আত্মীয়। আত্মীয়তার খাতিরে যদি সালাম ভাইয়ের ওয়্যারহাউজে এস আলমের গাড়ি থাকলে দোষ দেখছি না।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ঘটনা কী আমি জানি না। বিএনপির লোকজন চাঁদা দাবি করছে শুনে আমি এনামের সঙ্গে মীর গ্রুপের আবদুস সালামের একটি কারখানায় গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমরা সেটা মিটমাট করে দিয়ে চলে আসি।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এস আলম গ্রুপের জমি ও সম্পদ না কেনার পরামর্শ দেন। এদিন তিনি জানান, এস আলম গ্রুপ এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক-লেনদেন ও ঋণ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন প্রতিষ্ঠানটি নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন জমি ও সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছে। এগুলো ঠেকাতে আইনি প্রক্রিয়া দরকার।
ড. মনসুর বলেন, এস আলম বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছেন। এভাবে পৃথিবীতে কেউ ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না জানা নেই। এখন এস আলমের নামে–বেনামে থাকা সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। তাই এ মুহূর্তে এস আলমের সম্পদ যেন কেউ না কেনেন।
এনএইচ