গাজা নিয়ে যুদ্ধের মধ্যেই, ইসরায়েলের সরকারে ভাঙনের সুর
Share on:
টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। দীর্ঘ এই আগ্রাসনে ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দেশটি।
এরপরও হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি ইসরায়েল। এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারণ যুদ্ধোত্তর গাজার শাসনভার কে নেবে বা গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে এই মন্ত্রিসভায় ভাঙনের সুর দেখা দিয়েছে।
গাজার জন্য কোনো যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা তৈরি করা না হলে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ। অবশ্য যুদ্ধ শেষ হলে গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলি নেতাদের ওপর চাপ দিচ্ছে। রবিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
যুদ্ধের সাত মাস পার হলেও এখনো গাজায় হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে শতাধিক ইসরায়েলি। তাদের মুক্ত করে আনতে পারেননি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এমনকি এখন পর্যন্ত যুদ্ধ শেষে গাজা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা দিতে পারেননি তিনি। এসব নিয়ে দেশের ভেতরে যেমন তোপের মুখে পড়েছেন তেমনি বিদেশ থেকেও চাপে রয়েছেন।
বিশেষ করে যুদ্ধ পরবর্তী গাজা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা না দেয়ায় তার ওপর চরম নাখোশ ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ। আগামী ৮ জুনের মধ্যে যুদ্ধ পরবর্তী পরিকল্পনা দিতে না পারলে নেতানিয়াহু সরকার ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। তার এই আলটিমেটামের ফলে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন সরকারের সদস্যদের মধ্যে যে বিভেদ তা আরও প্রকটই হলো বলা যায়।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যান্টজ একথা জানান। গাজায় যুদ্ধ শেষ হলে এর পরদিন সেখানে কীভাবে শাসন কাজ পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য মন্ত্রিসভাকে ছয়-দফা পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গ্যান্টজ বলেন, ‘যদি আপনি জাতীয় বিষয়কে ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপরে স্থান দেন, তাহলে আপনি আমাদেরকে এই সংগ্রামে অংশীদার হিসেবে পাবেন। কিন্তু আপনি যদি ধর্মান্ধদের পথ বেছে নেন এবং পুরো জাতিকে অতল গহ্বরে নিয়ে যান, তাহলে আমরা সরকার ছাড়তে বাধ্য হবো।’
তবে নেতানিয়াহু তার এই মন্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এর অর্থ ‘ইসরায়েলের পরাজয়’। মূলত গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। আর সেই হামলার পরদিনই ইসরায়েলে গঠিত হয় যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। এছাড়া গ্যান্টজের মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন কয়েকদিন আগেই যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টও নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন। গাজায় বেসামরিক ও সামরিক শাসন নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই, এমন ঘোষণা নেতানিয়াহুকে জনসমক্ষে দেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গ্যালান্ট আরও বলেছেন, তিনি কয়েক মাস ধরে বারবার বিষয়টি উত্থাপন করে চলেছেন, কিন্তু (নেতানিয়াহুর কাছ থেকে) কোনও সাড়া পাননি। মূলত গাজায় যুদ্ধ এগিয়ে চলার পাশাপাশি এই ধরনের মন্তব্য ও বিবৃতি ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবং নেতানিয়াহুর সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলের চিত্র তুলে ধরছে। এতে করে দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় ও সরকারে বাড়ছে ভাঙনের সুরও।