যুদ্ধের মূল্য দিচ্ছে ইসরায়েল
Share on:
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন করে আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল।
দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ বিস্তৃত হওয়ায় গত মাসের শেষের দিকে ইসরায়েলের ক্রেডিট রেটিং নেমে গেলে দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ তাঁর দেশের অর্থনীতির চাপের কথা স্বীকার করেন।
গাজা যুদ্ধের রেশ না কাটতেই গত মাসে নতুন করে লেবাননে হামলে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)। গত ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে আইডিএফ। ওই হত্যাকাণ্ডের এক দিনের মাথায় ২৮ সেপ্টেম্বর বেজালেল স্মতরিচ বলেন, ইসরায়েলের অর্থনীতি দেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধের বোঝা বহন করছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় হামলা শুরুর এক বছরের মাথায় ইসরায়েল এখন একাধিক ফ্রন্টে অগ্রসর হচ্ছে। তারা লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরু করেছে। গাজা ও বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ গ্রহণের হুমকি দিয়েছে। তবে এই সংঘাত বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে স্বভাবতই তা ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক ব্যয় আরও বাড়িয়ে তুলবে।
ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর কার্নিত ফ্লাগ সিএনএনকে বলেন, সাম্প্রতিক ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি যদি দীর্ঘতর ও আরও তীব্র যুদ্ধে পরিণত হয়, তাহলে এটি ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রবৃদ্ধিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যুদ্ধে গাজার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। অঞ্চলটিকে ইসরায়েল অনেক আগেই অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পশ্চিম তীরও দ্রুত এবং উদ্বেগজনক অর্থনৈতিক পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ফিচ সলিউশনের মালিকানাধীন বাজার গবেষণা সংস্থা বিএমআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে আন্তসীমান্ত আক্রমণের কারণে এই বছর লেবাননের অর্থনীতি ৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। অন্যদিকে ইসরায়েলের অর্থনীতি ধারণার চেয়েও বেশি সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে তেল আবিব ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমনিতেই ইসরায়েলের জিডিপি কমছে। অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বাড়ছে জনসংখ্যা। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমছে। তার মধ্যে যুক্ত হয়েছে যুদ্ধের ব্যয়।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি বছর ইসরায়েলের অর্থনীতির পরিসর বাড়বে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে এখন অর্থনীতিবিদদের ধারণা, এটি ১ থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আগামী বছরের প্রবৃদ্ধিও আগের পূর্বাভাসের তুলনায় দুর্বল হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফেরাতে সুদের হার কমানোর অবস্থানে নেই। কারণ, ক্রমবর্ধমান মজুরি এবং যুদ্ধের অর্থায়নে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি ত্বরান্বিত হচ্ছে।
ব্যাংক অব ইসরায়েলের গত মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত তাদের ৬৬ বিলিয়ন ডলার বা ২৫০ বিলিয়ন শেকেল ব্যয় হবে। এর মধ্যে সামরিক ব্যয়ের পাশাপাশি বেসামরিক খরচও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তে হাজার হাজার ইসরায়েলি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। এখন তাদের পুনর্বাসনে জিডিপির একটি বড় অংশ ব্যয় হবে।
এই হিসাব যখন করা হয়, তখনো লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়নি। কিন্তু এখন লেবাননের পাশাপাশি এই অঞ্চলে ইরানের বিভিন্ন প্রক্সি সংগঠনগুলোর সঙ্গেও সংঘাতের মাত্রা বাড়বে। এতে সামরিক খাতে ব্যয় আরও বাড়বে। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ অবশ্য আশাবাদী, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ইসরায়েলের অর্থনীতি আবার স্বরূপে ফিরবে। তবে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, চলমান সংঘাতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হবে।
ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর কার্নিত ফ্লাগ বর্তমানে ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের রিসার্চ উইংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর আশঙ্কা, সামরিক খাতে জোর দিতে গিয়ে সরকার হয়তো বিনিয়োগ খাতে বাজেট কাটছাঁট করতে পারে। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে।
ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষকেরাও একই রকমের মত দিয়েছেন। তাঁদের মতে, গাজা ও লেবাননের যুদ্ধ ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুদ্ধের আগের সময়ের তুলনায় দুর্বল অবস্থায় ফেলে দেবে। এতে করে ইসরায়েলের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে।
এনএইচ