পোশাক কারখানায় অস্থিরতার ৩ কারণ চিহ্নিত
Share on:
দেশে তৈরি পোশাক শিল্পে চলমান অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষের জন্য তিন কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এগুলো হলো- বহিরাগতদের আক্রমণ-ভাঙচুর, শ্রমিকদের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দাবির সমন্বয়ে অস্থিরতা ও ঝুট ব্যবসার আধিপত্য। অবশ্য বহিরাগতদের আক্রমণ এখন আর হচ্ছে না। তবে এই অস্থিরতা শিগগিরই নিরসনে মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষকে আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। এছাড়া রোববার সব কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে শ্রমিক অস্থিরতা না কাটলে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন কারখানা মালিকরা।
শনিবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নুরুল কাদির অডিটোরিয়ামে আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে শ্রমিক অসন্তোষ তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন আশ্বাস দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সহ পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
শ্রমিক অসন্তোষের জন্য তিন কারণ দায়ী উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান বলেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক, তবে সমাধান না হলে শিল্পের অস্থিরতা নিরসন সম্ভব নয়। পোশাক শিল্পকে রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে সেনাবাহিনী।
আর শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতেই একটি চক্র শিল্প কারখানায় অস্থিরতা তৈরি করছে। এখন বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে উপদেষ্টাদের বিশেষভাবে নজর দেয়া জরুরি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করে, তাহলে তাদের মনে রাখা হবে। তিনি বলেন, রোববার সব কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পোশাক মালিকরা বলেছেন, অস্থিরতার কারণে কোনো কারখানা বন্ধ করতে হলে সেখানে ১৩/১ ধারা বাস্তবায়ন করবেন তারা। এরপর উপদেষ্টা আদিলুর রহমান জানান, এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নেবে। তবে সরকার ও অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করে, তাহলে তাদের মনে রাখা হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, শ্রমিকরা আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আমরা আপনাদের কথা শুনবো। আপনাদের সমস্যার সমাধান করব। মালিকদের উদ্দেশে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিন। এটা বড় সমস্যা। শ্রমিকদের নাম করে বহিরাগত যারা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সেনাবাহিনী পাশে না থাকলে সব পোশাক কারখানায় লুট হতো উল্লেখ করে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানায় ভাঙচুর না হলে, অগ্নিসংযোগ হবে না এমন নিশ্চয়তা পেলে কারখানা চালাবো; না হলে আর চালাবো না। তিনি বলেন, বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী ২৭০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চললে ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও অনেক কারখানা বন্ধ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ সরে যাচ্ছে। অনেক কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। এই মাসে কোনোভাবে বেতন দিতে পেরেছি। কিন্তু সামনের মাসে ৭৫ হাজার শ্রমিকের বেতন দিতে পারব কি না তা জানি না।
এমএইচ