নির্বাচনে জিতব, অর্থনীতিও পুনর্গঠন করব : ইমরান খান
Share on:
পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় সদস্যদের অনাস্থাভোটে ক্ষমতা হারানো পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রেসিডেন্ট ইমরান খান আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ফের সরকারপ্রধান হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপকভাবে আশাবাদী।
সেই সঙ্গে তিনি মনে করেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটের যে চোরাবালিতে পাকিস্তান আটকা পড়েছে— তা থেকে দেশকে উদ্ধার করার মতো ক্ষমতা পিটিআইয়ের আছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, ‘যদি আমরা ক্ষমতায় আসতে পারি, সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য বেশি সময় পাবো না; কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পাকিস্তান বর্তমানে যে সংকটের ঘূর্ণিতে পড়েছে— তা থেকে দেশকে উদ্ধারের ক্ষমতা পিটিআইয়ের আছে।
সাংবিধানিক সূচি অনুযায়ী পাকিস্তানে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে চলতি বছর আগস্টের পর। ব্লুমবার্গকে ইমরান খান বলেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ফের নিজের দলের জেষ্ঠ্য নেতা শওকত তারিনকে ফিরিয়ে আনবেন তিনি।
‘গত বছর শ্রীলঙ্কায় যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, চলতি বছর একই চিত্র পাকিস্তানেও দেখা দেওয়ার প্রবল শঙ্কা আছে। (নির্বাচনে জয়ের পর) আমাদের এমন কিছু নীতি গ্রহণ করতে হবে যা পাকিস্তানের আগেকার কোনো সরকার নেয়নি। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে তারিন একজন প্রয়োজনীয় ব্যক্তি।’
দশকের পর দশক ধরে সামরিক শাসন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংকট যাচ্ছে পাকিস্তানে। এই সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে।
পাকিস্তানের বর্তমান এই সংকটের মূল কারণ ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়া। একটি দেশের ন্যূনতম অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকতে হয়। পাকিস্তানের রিজার্ভে যে পরিমাণ ডলার বর্তমানে আছে, তা দিয়ে বড়জোর কয়েক সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
টালমাটাল অর্থনীতিকে স্থিতাবস্থায় আনতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৬৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে পাকিস্তানের সরকার; কিন্তু সেই ঋণ মিলবে কিনা— তা এখনও স্পষ্ট নয়। আইএমএফ এখন পর্যন্ত ঋণ প্রদানের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেয়নি; তবে পাকিস্তান সরকারকে কিছু শর্ত দিয়েছে। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন এই ঋণের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ভূমিকা নিয়েছে আইএমএফের যাবতীয় শর্তকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।
বর্তমান সরকারের সবচেয়ে কঠোর সমালোচক ইমরান খানও এই অবস্থানকে সমর্থন করছেন। ব্লুমবার্গকে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় অবশ্য আইএমএফের সঙ্গে ইমরান খানের খানিকটা তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অমান্য করে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন পিটিআই সরকার।
এ প্রসঙ্গে ব্লুমবার্গকে ইমরান খান বলেন, ‘আমরা সে সময় রাশিয়ার কাছ থেকে কমদামে জ্বালানি কেনার চুক্তির জন্য কাজ করছিলাম। সেই সংক্রান্ত প্রাথমিক কাজ অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছিল; কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি করা যায়নি। এটা দুভাগ্যজনক।’
সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন; কিন্তু তারপর থেকেই বাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে তার।
এই অবসরে পার্লামেন্টের বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা ইমরানের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে থাকেন এবং তারই ধারবাহিকতায় চলতি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান তিনি। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) চেয়ারম্যান শেহবাজ শরিফ।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আগাম নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে পিটিআই। গত ৩ নভেম্বর দলের এক লংমার্চ কর্মসূচিতে ভাষণ দেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন ইমরান খান। সেই ক্ষত এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। লাহোরের বানি গালা এলাকায় নিজ বাসভবনে বর্তমানে বিশ্রামে আছেন তিনি।
বাড়ির চারপাশে প্রায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে, কিন্তু তারপরও নিজের জীবন ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের এই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ।
৭০ বছর বয়স্ক ইমরান খান ব্লুমবার্গকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি কিছুটা ভয়ে আছি, কারণ আমার শত্রুরা খুবই শক্তিশালী। দেশের পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন আমার বিরুদ্ধে।’
এমআই