যে ফর্মুলায় সরকার গঠন করবে পিপিপি-পিএমএল-এন
Share on:
পাকিস্তানে সরকার গঠনের সমঝোতা অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজ শরিফের ভাই শেহবাজ শরিফ এবং প্রেসিডেন্ট পদে আসিফ আলী জারদারি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রায় দুই সপ্তাহের দর-কষাকষির পর অবশেষে পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
মঙ্গলবার পিএমএল-এন এবং পিপিপির সমন্বয় কমিটি দীর্ঘ আলোচনার পর সরকার গঠনের চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কোনও দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পায়নি। যে কারণে দেশটিতে ঝুলন্ত সংসদ ঘিরে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সরকার গঠনের জন্য দেশটির প্রধান তিন রাজনৈতিক দল মিত্রদের সাথে জোট করার বিষয়ে জোরাল প্রচেষ্টা শুরু করে। এর মাঝেই মঙ্গলবার পুরোনো দুই জোটসঙ্গী পিএমএল-এন এবং পিপিপি নতুন করে সরকার গঠনের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
ইসলামাবাদে মঙ্গলবার গভীর রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল জারদারি ভুট্টো এই চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিলাওয়ালের পাশে বসা শেহবাজ শরিফ বলেন, সরকার গঠনের জন্য দুটি দলের পর্যাপ্ত আসন আছে। তাদের প্রতি অন্যান্য ছোট দলের সমর্থনও রয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পিএমএল-এন ৭৯টি আসন নিয়ে জাতীয় পরিষদের বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর পিপিপি পেয়েছে ৫৪টি আসন। অন্য আরও চারটি দলকে সঙ্গে নিয়ে ৩৩৬ আসনের জাতীয় পরিষদে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে পিএমএল-এন ও পিপিপি। যদিও নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৯২টি আসনে জয় পেয়েছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
২৪ কোটিরও বেশি মানুষের এই দেশটিতে সরকার গঠন নিয়ে শুরু হওয়া টানাপোড়েন ঘিরে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্থর গতির প্রবৃদ্ধি আর রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান জঙ্গি হামলার মাঝে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দেশটিতে স্থিতিশীল প্রশাসন দরকার।
- যে ফর্মুলায় ক্ষমতা ভাগাভাগি
সরকারের মেয়াদের কোনও পর্যায়ের শেহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি। তবে প্রেসিডেন্টসহ সাংবিধানিক অন্যান্য শীর্ষ পদ পাবে দলটি। এ ছাড়া দেশটির বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের মন্ত্রিসভাতেও যোগ দেবে না পিপিপি।
- কী পাবে পিপিপি?
> প্রেসিডেন্ট পদ
> সিনেট চেয়ারম্যান
> পাঞ্জাবের গভর্নর
> খাইবার পাখতুনখোয়ার গভর্নর
> বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী
> জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার
অন্যদিকে, কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে সরকার গঠনে পিপিপির সমর্থন পাবে পিএমএল-এন। নওয়াজ শরিফের দলও বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য পিপিপির মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেবে।
- পিএমএল-এন কী পাবে?
> প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
> পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী
> জাতীয় পরিষদের স্পিকার
> সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের গভর্নর
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকতে হবে। ওই অধিবেশনে নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।
- কীভাবে সমন্বয় করবে পিপিপি-পিএমএল-এন?
দুই দলের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির ফর্মুলার বিষয়ে বুধবার পিপিপির মুখপাত্র ফয়সাল করিম কুন্দি বলেছেন, মন্ত্রিসভায় সদস্যদের অন্তর্ভুক্তিতে শেহবাজ শরিফের বিশেষ অধিকার থাকবে। তার চাওয়া অনুযায়ী মন্ত্রিসভায় সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
পিপিপি মন্ত্রিসভায় না থাকলে কাজের কৌশল কেমন হবে, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে কুন্দি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী ঘোষণা করবে। আমরা সমালোচনার খাতিরে সমালোচনায় লিপ্ত হব না। তবে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করব।
সূত্র: জিও নিউজ, ডন।
এসএম