আমাদের নিজেদেরকে সর্ব প্রথম দাঈ ইলাল্লাহ হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান
Share on:
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গোটা জাতিকে পুনর্গঠন করা ছাড়া বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। আমি কর্মপরিষদের সদস্যদেরকে দরদি মন নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের নিজেদেরকে সর্ব প্রথম দাঈ ইলাল্লাহ হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে।
মানুষকে সচেতন করতে হবে। জাহান্নামের আযাব থেকে নিজেদের, নিজেদের পরিবারবর্গ, প্রতিবেশি, সমাজ ও দেশকে বাঁচাতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের পূর্ণাঙ্গ বৈঠক করতে পেরে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, আল-হামদু লিল্লাহ।
আমি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করি সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম এবং সাবেক আমীরে জামায়াত ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, অধ্যাপক একেএম নাজির আহমাদ, মাওলানা আবদুস সুবহান ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও জনাব আবদুল কাদের মোল্লা এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মীর কাসেম আলীকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সকলের শাহাদাত কবুল করুন এবং তাদেরকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন।
আমীরে জামায়াত বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে আপনারা এই সংগঠনের অভিভাবক এবং দেশ ও জাতির বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী। বাংলাদেশ আজ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবিধান প্রদত্ত সভা-সমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাত আজ লুটেরাদের দখলে। দেশে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ আজ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সরকার অর্থের উৎসসমূহ ও বিদেশী সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঋণের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করছে। দেশের অর্থনীতি আজ বিধ্বস্ত।
দুনিয়ায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত। সেই আদালতে মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে সাজা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে।
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা বলতে আজ কিছু নেই। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এ সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনসমূহ এবং অতি সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের কেন্দ্র দখল ও ভোট লুটপাটের ঘটনা দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার মূলত দেশকে একটি নির্বাচনহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
আমীরে জামায়াত আরও বলেন, সংগঠনের কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে আমাদের সবাইকে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। নেতারা জনবান্ধব হলে সংগঠনের জনসমর্থন যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি গণভিত্তিও মজবুত হয়। আমরা দেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন চাই। কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে মজবুত সংগঠন গড়ে তুলে সামগ্রিক পরিবর্তন করা সম্ভব।
আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য শিক্ষা কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনৈতিক ও আদর্শহীন শিক্ষা আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। এ অবস্থায় আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনৈতিক ও অপসংস্কৃতির সয়লাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য অভিভাবকসুলভ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আমীরে জামায়াত কর্মপরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, এ সরকার জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সাজানো মামলায় ফাঁসির দণ্ড দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করেছে। তারা ভেবেছিল জামায়াত নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যাবে এবং জেল-জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জামায়াতকে নিশ্চিহ্্ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু তাদের সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। তাদের প্রতিটি আঘাতে জামায়াত আরও শক্তিশালী হয়েছে। কর্মপরিষদ সদস্যদেরকে সংগঠনের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রেসবিজ্ঞপ্তি//এমএইচ