tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:৩১ পিএম

নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চক্রান্ত হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী


hasina-3-20231228180750

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,‌ এবারের নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক চক্রান্ত হচ্ছে। তাই নির্বাচনী পরিবেশটা যাতে সুন্দর থাকে, উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সেদিকে সবাই খেয়াল রাখবেন।


বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ছয়টি জেলার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভাষণ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর ও শেরপুর জেলা; ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর ও বান্দরবান জেলায় আজ নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসব জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেবল দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পারবে। এবারের নির্বাচন নিয়ে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে অনেক চক্রান্ত হচ্ছে। তাই নির্বাচনী পরিবেশটা যাতে সুন্দর থাকে, উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়; সেই দিকে সবাই খেয়াল রাখবেন। বিএনপি সন্ত্রাসী, জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল। এরা নির্বাচনে না এলে সেই ভোট অংশগ্রহণমূলক হবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না।’

তিনি বলেন, ভোটারদের অংশগ্রহণেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়ে যাবে। ওই সন্ত্রাসীদের দল; ওরা তো নির্বাচনে বিশ্বাসই করে না। তাদের দ্বারা কোনো কল্যাণ হবে না দেশে। সেই জন্য উন্মুক্ত নির্বাচন করতে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন। জনগণ যাকে চাইবে, তাকেই মেনে নিবেন সবাই।

এসময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার সব প্রার্থীকে পড়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন দলের প্রধান। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার পড়ে নেবেন এবং সেই অনুযায়ী ভোট চাইবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর পর অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার সংস্কৃতি চালু করেছিল জিয়াউর রহমান। তখন স্বাধীনতাবিরোধীদের সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারায় চলতে থাকে দেশ।

তিনি বলেন, গ্যাস বিক্রির চক্রান্ত করে ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে বিএনপি। নির্বাচনবিরোধী কাজ করে চলেছে বিএনপি। মা-শিশুকে এমনভাবে হত্যা সহ্য করা যায় না। এরা সবসময় নির্বাচন বানচালের তালে থাকে। কিন্তু নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না, এটাই বাস্তবতা।

মানুষ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল বলেই দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে, আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের ধারা অব্যাহত রাখুন যাতে দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়। দলের নির্বাচনী ইশতেহার সব প্রার্থী পড়ে নেবেন এবং সেই অনুযায়ী ভোট চাইবেন। অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আছে এবারের নির্বাচন নিয়ে। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হলো মানুষ পোড়ানো আর নির্বাচন ধ্বংস করা।

তিনি আরও বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও মানুষের সেবা করার সুযোগ পাবে; সেটাই প্রত্যাশা।

শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চাওয়ার অধিকার যেমন প্রার্থীর আছে তেমনি ভোট দেওয়ার অধিকার জনগণের। এখানে কেউ কারো ওপর কোনো বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন না। কোনো সংঘাত সৃষ্টি করবেন না।

তিনি বলেন, এখন ডিজিটাল যুগ। সবার হাতেই মোবাইল ফোন রয়েছে, সিসি ক্যামেরা রয়েছে। কাজেই যারাই গোলমাল করবেন, ছবি কিন্তু উঠে আসবে। আর নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে কেউ কিন্তু রেহাই পাবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। আর জনগণ ভোট দেবে তাদের সেই ভোট দেওয়ার সুন্দর পরিবেশ তেরি করে দিতে হবে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে দিতে হবে এবং যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়; সেই ব্যবস্থাটা সবাইকে নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশাআল্লাহ আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে, জনগণের কাছে সেটাই আমাদের দাবি। সেটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তথা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে বিএনপির-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট মিলে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। এরপর থেকেই বিএনপি নির্বাচন বিরোধী কার্যকলাপ শুরু করে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করার জন্য ২০১৩ সাল থেকে আগুন সন্ত্রাস শুরু করে। তাদের দেওয়া আগুনে কত মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে তার হিসাব নেই।

‘জিয়াউর রহমান যেমন ক্ষমতায় এসে হত্যা, গুম, খুন শুরু করে খালেদা জিয়াও একইভাবে ক্ষমতায় এসে একই কর্মকাণ্ড করেছে’ —বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপির ক্ষমতায় আসার পর আরও এক ধাপ অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দুর্নীতি, হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন —এমন কোনো বিষয় নেই যে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন করেনি। এই কারণেই বিএনপিকে ২০০৮ সালে দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করে। আবারো ২০১৩-১৪ সালের মতো বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে নির্বাচন বানচালের নামে।

তিনি বলেন, একটি দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এদেশের অতীত ইতিহাস বলে আওয়ামী লীগের হাতে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, এছাড়া অন্য কোনো দলের হাতে হয় না। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন করেছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেছিলাম। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার কাজ করেছে। আজ বাংলাদেশের দৃশ্যপট উন্নয়ন অগ্রগতিতে পরিবর্তন হয়েছে, ২০২১ সালেই উন্নয়নশীল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আমরা পেয়েছি। সেটাকে ধরে রেখে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটা মানুষ যেন উন্নত জীবন পায় সেটিই আমাদের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

গত ২০ ডিসেম্বর সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.) মাজার জিয়ারত এবং সমাবেশের মাধ্যমে দলের নির্বাচনী প্রচারণার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) তিনি বরিশাল যাবেন এবং ওইদিন বিকেল ৩টায় জেলা শহরে এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর ৩০ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সফর করবেন এবং গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) আসনের জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। একই দিন মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া তেজগাঁও দলীয় কার্যালয় প্রান্তে এবং শেরপুর প্রান্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এসএম