মশা একবার উড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
Share on:
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, মশা যে পর্যন্ত না কমবে সে পর্যন্ত ডেঙ্গুরোগী কমবে না এবং মৃত্যুও কমবে না। মশা একবার উড়ে গেলে তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। লার্ভা পর্যায়ে মশাকে ধ্বংস করতে পারলে আগামীতে ডেঙ্গু কম থাকবে বলে জানান।
আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে চীনের সিনোভ্যাক্স ফাউন্ডেশনের দেওয়া ডেঙ্গুর ২০ হাজার টেস্টিং কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু যে মৌসুমে ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে, তখনই কেবল স্প্রে করলাম, সারাবছর স্প্রে করলাম না, তাতে কাজ হবে না। সে জন্য সারাবছর কাজ করতে হবে। যে ওষুধটা দেওয়া হচ্ছে, সেটা সঠিক মান ও পরিমাণের হতে হবে, যাতে ওষুধগুলো কার্যকর হয়ে মশাটা মারা যাবে।
ডেঙ্গ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গতবছর একটু কম ছিল, এবছর অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আমরা চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ঘাটতি রাখিনি। আমাদের হাসপাতালে বেড তৈরি করা হয়েছে, পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সেখানে কিটের কোনো অভাব নেই। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কিট দিচ্ছে বলে আমরা নিচ্ছি। আমাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্যালাইনের সংকট সরকারি হাসপাতালে নেই।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু কিছুটা কমেছে। আমরা দেখেছি অন্যান্য জেলায় অনেক বেড়েছে। আগে যা ছিল তা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সবগুলো জেলায় বাড়তি এবং প্রত্যেক জেলায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। যারা আক্রান্ত হয়েছে বেশিরভাগই ঢাকা থেকে যারা গেছে তারা আক্রান্ত হয়ে অন্যান্য জেলায় গেছে, বাড়িতে গেছে। সেখানে আবারও মশার কামড়ে সেটা ছড়িয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, মশা যে পর্যন্ত না কমবে সে পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী কমবে না এবং মৃত্যুও কমবে না। কমাতে হলে সবাই মিলে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাটাই করছি।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ডেঙ্গুটা বেশরিভাগই বড় বড় বিল্ডিংয়ের নিচে, আশপাশের ড্রেন-নালাতে এবং পরিত্যক্ত বিভিন্ন পাত্রে জমা হয়ে আছে। বেশিরভাগ দেখা গেছে ফুলের টবে আছে। এ সব জায়গাগুলো পরিষ্কার হওয়া দরকার এবং পরিত্যক্ত পাত্রগুলো পরিষ্কার করা দরকার। আমাদের নিজেদের বাড়ি যেটা আছে সেটা স্প্রে করতে হবে, পরিষ্কার করতে হবে। বাইরের যেসব ডোবা-নালা আছে সেটা সিটি করপোরেশন পরিষ্কার করছে, আমরা মনে করি আরও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, যে সব কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে সে কীটনাশকগুলো যাতে ইফেকটিভ হয়, ভালো হয় এবং মশা যাতে মরে, মশার লার্ভা যাতে মরে সেই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা দরকার এবং নিশ্চিত হওয়া দরকার। ঢাকা সিটি করপোরেশনে ওনারা করছেন, কমছে। তাতে বোঝা যায়, যে মশা কমে আসছে। রোগীর সংখ্যা এখন একটু কমে আসছে। অন্যান্য জেলাতে স্প্রে বেশি করে করতে হবে। পৌরসভা এবং অন্যান্য সিটি করপোরেশনে সজাগ হতে হবে, আরও বেশি একটিভ হতে হবে। তবেই আমাদের কমবে।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) একটা পরিসংখ্যান আমাদের দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৬০০ রোগী হাসপাতালে পেয়েছি সেটা অনেক এবং মোট রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮০০। প্রায় নয় হাজার রোগী এখন হাসপাতালে আছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৩৪ জনের। যেটা গত কয়েক বছরের রেকর্ড। মৃত্যুটা আরও বেশি হচ্ছে, এ বিষয়ে আমরা বলতে চাই যে অনেক সময় চিকিৎসা নিতে দেরি হচ্ছে। দেরি হলে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। সে জন্য জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করে নেন। দ্রুত হাসপাতালে আসেন- বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মাসখানেক আগে শুনেছিলাম ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত উদ্যোগ থাকবে। আদৌ কি এমন কোনো উদ্যোগ আছে? সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, এ যে মানুষ মারা যাচ্ছেন, বাচ্চাগুলো মারা যাচ্ছে, এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথাই নেই। এসব পরিবারের কান্না সরকারের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনারা কী বলবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটি মৃত্যুও আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। আমরা হাসপাতালে যথাযথ চেষ্টা করে প্রতিটি রোগীকে বাঁচানোর জন্য। যে চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে, বিশ্বজুড়ে যে চিকিৎসাব্যবস্থা গৃহীত, সেটাই আমরা নিচ্ছি। সেই ব্যবস্থাই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যাতে কোনো ঘাটতি নেই।
‘হয়তো, আমরা যেটা বারে বারে বলেছি, দেরি করে আসেন রোগীরা, তখন আমাদের কিছু করার থাকে না। কাজেই দেরি করে না আসতে আমরা জনগণকে আহ্বান করছি। যাতে পরীক্ষা করা হয়, জ্বর হলেই। তাতে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা চিকিৎসা দিতে পারি। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় প্রতিরোধ করা। এটির একমাত্র উপায় হলো, মশা নিধন। সে জন্য প্রয়োজন পদক্ষেপ আরও জোরদার ও সারা বছরব্যাপী হওয়া দরকার’ বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পাকা বাড়িগুলোতে ডেঙ্গু বেশি হচ্ছে। যেখানে পাত্রে পানি জমে থাকে। আমরা সে কারণে এ বার্তা দিতে চাই, নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে হবে, সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছেন আপনি। এটি কীসের ভিত্তিতে করেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এসেছে কথাটি বলেছি, কারণ ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। এখন ৮০০ রোগী, এর আগে দেড় হাজার পর্যন্ত আমরা পেয়েছি। কিন্তু ঢাকার বাইরের অন্য জেলাগুলোতে বেড়েছে, সেখানে কমেনি। আমি আগেও এ কথা বলেছি।
করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে ঢালাওভাবে কাজ করেছে, সেইভাবে ডেঙ্গুর বেলায় করা যায় কিনা। আবার সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু বাড়লে জরুরি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের যতটুকু দায়িত্ব আছে, সেটা পালনের চেষ্টা করছি। আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো, চিকিৎসা দেওয়া। সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা চিকিৎসক, সেবিকাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি নেই, শয্যা আমরা বাড়িয়েছি। পাশাপাশি, সচেতনতামূলক কাজও করে যাচ্ছি। অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। তারপরে অ্যাকশন তো সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। সেই অ্যাকশনটুকু সময়মতো দেখতে চাই। মশা একবার উড়ে গেলে তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। লার্ভা পর্যায়ে মশাকে ধ্বংস করতে পারলে আগামীতে ডেঙ্গু কম থাকবে। সারা বছর এ কার্যক্রম চলমান থাকা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনকে সারাবছর করা প্রয়োজন- বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা যাচ্ছে, সেগুলো যাতে ভালো হয়, মশা যাতে মরে, লার্ভা যাতে মরে, সেই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা দরকার এবং নিশ্চিত করা দরকার। সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছেন, তাতে বোঝা যায়, মশা কমে আসছে। যেহেতু ঢাকায় এখন রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। কিন্তু অন্য জেলাতে স্প্রে করতে হবে বেশি করে। পৌরসভাসহ অন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে আরও সজাগ ও সক্রিয় হতে হবে। তবেই মশা কমবে। ঢাকায় চীন দূতাবাস এবং সিনোভ্যাক্সের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট হস্তান্তর করেন।
এমবি