উত্তর প্রদেশের নির্বাচন যোগী-প্রিয়াঙ্কাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে !
Share on:
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে এখন নির্বাচনের উত্তাপ। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সাত দফায় রাজ্যটির বিধানসভার ৪০৩ আসনে ভোটগ্রহণ হবে।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে এখন নির্বাচনের উত্তাপ। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সাত দফায় রাজ্যটির বিধানসভার ৪০৩ আসনে ভোটগ্রহণ হবে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ১০৭ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।
গোরক্ষপুর শহরের আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কংগ্রেসও প্রথম দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। দলটি মোট প্রার্থীর ৪০ শতাংশ নারী প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মূল লড়াই হবে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির মধ্যে।
যোগীর নেতৃত্বে বিজেপি দ্বিতীয়বার উত্তর প্রদেশে সরকার গড়বে, নাকি চমকে দেবে সমাজবাদী পার্টি, সেই উত্তর মিলবে ১০ মার্চ।
কিন্তু এই নির্বাচনের ফল ভারতের বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী নেতার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেবে বলেও মনে করছেন তারা।
গত অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী দুই পদ মিলিয়ে সরকারের প্রধান পদে নরেন্দ্র মোদির দুই দশক পূর্ণ হয়েছে। মোদি নিজেকে সবল নেতা, দুর্নীতিমুক্ত, পরিবারের পিছুটানহীন এক রকম সন্ন্যাসী, উন্নয়নকামী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চান।
কেউ যদি মোদিকে অনুকরণ করতে চান, তারও এসব গুণ থাকতে হবে। যোগী আদিত্যনাথ ঠিক সেটাই করছেন। উত্তর প্রদেশের নির্বাচনি প্রচারে তিনি নিজেকে কড়া প্রশাসক, হিন্দুত্বের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছেন। আর তিনি এমনিতেই গেরুয়া পোশাকধারী সন্ন্যাসী।
মোদির মতো তার বিরুদ্ধেও ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ তোলা কঠিন। বিজেপিতে মোদির কোনো চ্যালেঞ্জার নেই। উত্তরসূরিও নেই।
যোগী চ্যালেঞ্জার না হয়ে মোদিকেই অনুকরণ করে তার উত্তরসূরি হয়ে উঠতে চাইছেন, তা স্পষ্ট। পারবেন কি? উত্তর প্রদেশের নির্বাচন সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে।
এবার কংগ্রেসের প্রসঙ্গে আসা যাক। উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস জিতবে আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মুখ্যমন্ত্রী হবেন—এমন স্বপ্ন কংগ্রেসের নেতাকর্মীরাও দেখেন না।
কিন্তু প্রিয়াঙ্কাকে সামনে রেখে কংগ্রেস উত্তর প্রদেশে এক নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। এই প্রথম প্রিয়ঙ্কা কোনো রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের নেতৃত্বে।
তাকে সামনে রেখে নারী ভোটারদের টানার চেষ্টা হচ্ছে। এই মডেল সফল হলে অন্যান্য রাজ্যেও এর অনুকরণ হবে। সেক্ষেত্রে কি কংগ্রেসে রাহুল গান্ধীর চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠবেন প্রিয়াঙ্কা?
এত দিন ভারতের হিন্দি বলয়ে জাতপাতের রাজনীতির দুই প্রধান চরিত্র ছিলেন মুলায়ম সিং যাদব ও মায়াবতী। জাতপাতের যোগ-বিয়োগে যে যখন সফল হয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেছেন।
অমিত শাহের আমলে বিজেপি জাতপাতের অঙ্ক বদলে দিয়েছে। বিজেপি হিন্দু উচ্চবর্ণ, ব্রাহ্মণের সঙ্গে ওবিসি, দলিত সবই জুড়ছে।
বাকি নেই মুলায়মের যাদব সম্প্রদায় ও মায়াবতীর দলিত জাটভ সম্প্রদায়ও। জাতপাতের অঙ্ক শেষ হয়ে গেলে অখিলেশ ও মায়াবতীর রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ কী? উত্তর প্রদেশের নির্বাচন এই প্রশ্নের উত্তরও দেবে।
যারা বলছেন, উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিশা ঠিক করে দেবে, তারা হয়তো ঠিকই বলছেন।
যদিও ২০১২ সালের উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় তৃতীয় স্হানে আটকে যাওয়া বিজেপির ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিততে অসুবিধা হয়নি; কিন্তু এবারের নির্বাচনের ফল যে বিজেপি, কংগ্রেসের ভেতরের সমীকরণ ও সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টির ভবিষ্যত্ বাতলে দেবে, তাতে কোনো ভুল নেই।
গত নির্বাচনে রাহুল গান্ধী সমাজবাদী পার্টির অখিলেশের সঙ্গে জোট করেছিলেন। অখিলেশ সেই ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রীর গদি হারান।
দুই বছর পরে লোকসভা ভোটে ধরাশায়ী রাহুল কংগ্রেসের সভাপতির পদই ছেড়ে দেন। পাঁচ বছর পরে রাহুল, অখিলেশ দুই জনেই আবার রাজনৈতিক কেরিয়ারের নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে।
একসময় উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীও কংগ্রেস-বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু এখন রাজনীতিতে তার উপস্হিতি নেই বললেই চলে।
নির্বাচনে জিতে মায়াবতী ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এমন আশা কেউই করছেন না। তার দল গতবারের মতো উনিশটি বা তারও কম আসনে জিতলে মায়াবতী জাতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন।
তাই এবারের ভোট যোগী, অখিলেশ, প্রিয়াঙ্কা, মায়াবতীর মতো অনেকের ভবিষ্যত্ নির্ধারণ করে দেবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এইচএন