tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:০৫ পিএম

বিজয়কে অর্থবহ করতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে : জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির


মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বিজয়ের ৫১ বছর পরেও দেশের জনগণ প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। দেশের যুবশক্তি আজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ আজ স্বাভাবিকভাবে জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছে না। বিনা অপরাধে মানুষকে গুম ও খুন করা হচ্ছে, দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে আয়নাঘর সৃষ্টি করে এক ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আইন-আদালত ও বিচার ব্যবস্থা আছে ঠিকই কিন্তু সুবিচার বলতে যা বুঝায়, তা বাংলাদেশে নেই। সরকারের ফরমায়েসী রায় দিতে বাধ্য হচ্ছে বিচারকগণ। যে দেশে বিচারকগণ স্বাধীনভাবে কোনো মামলায় রায় দিতে পারেন না, সেখানে সুবিচার আশা করা যায় না। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন বাহিনী আছে অথচ লজ্জার বিষয় হচ্ছে রক্ষকই আজ ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। ফলে এই সব বাহিনীর দ্বারা জনগণ উপকৃত হচ্ছে না। এভাবে দেশে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বলতে চাই বিজয়কে অর্থবহ করতে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারে অধীনে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিজয়ের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখতে এবং শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ১৬-ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান মহান বিজয়ের এই দিনে যারা নিজেদের জীবন দিয়ে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন তাদেরকে গভীরভাবে স্মরণ করেন এবং মহান আল্লাহ তায়া’লার কাছে সেই সকল বীর সেনানীদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে সূরা নাসর নাজিল করে রাসূল সা:-কে বিজয় উৎসব পালনের একটা নিয়ম পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। যেকোনো বিজয়ে আল্লাহর তাসবিহ পাঠ, ইস্তেগফার ও কোনো সীমালঙ্ঘন হয়ে থাকলে বিজয় অর্জনের সাথে সাথে তা সংশোধন করে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। মুসলিম হিসেবে মূলত বিজয় দিবসের শিক্ষা হলো ‘আল্লাহর সামনে নত হওয়া।’ কিন্তু বর্তমান মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে সেই রকম কোনো নিয়ম-পন্থা কার্যত নেই। আজকে দেশের জনগণ পুরোপুরি অধিকার হারা অবস্থায় রয়েছে। সংবিধানে স্বীকৃত কোনো অধিকারই জনগণ ভোগ করতে পারছে না। দেশে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের অধিকার, নির্বাচনের অধিকার, খাদ্য, বস্ত্রসহ মানব সভ্যতার যতগুলো অধিকার রয়েছে তা বর্তমানে বাংলাদেশে পুরোপুরি লঙ্ঘিত।

তিনি বলেন, দেশের সরকার যদি ভালো হয় সেখানে দেশের জনগণ তার অধিকার বুঝে পায়। রাসূল সা: বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম সরকার বা শাসক হচ্ছে ওই সরকার যে সরকার জনগণকে ভালোবাসে এবং জনগণ সে সরকার পেয়ে খুশি থাকে। অন্যদিকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সরকার হচ্ছে ওই সরকার, জনগণকে তারা ভালোবাসে না বরং জনগণ সে সরকারকে পছন্দ করে না। এই হাদিসের আলোকে আজকে আমাদের বাংলাদেশে এক স্বৈরাচারী দুঃশাসন চলছে, জনগণ তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের জনগণকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে ন্যায় এবং ইনসাফভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকলকে অগ্রণী ভুমিকা রাখতে হবে।

আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান একজন সজ্জন ব্যক্তি। তিনি বন্যা, অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকে মানবতার সেবায় অন্যন্য নজির স্থাপন করেছেন। মসজিদ ও মাদরাসায় ছুটে বেড়িয়েছেন। মানুষের জন্য নতুন ঘর তুলে দিয়েছেন। ঠিক তাকেই ইতিহাসের নির্মমতায় মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী জন্ম থেকেই যে কোনো সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। আমরা অবিলম্বে আমিরে জামায়াতের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শূরা সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা শাহীন আহমদ খান, আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আজ দূর্ভাগ্য দেশের জন্য বিজয়ের প্রকৃত অর্থ এখানে ম্লান হয়ে গেছে। দেশের জনগণ দেখেছে আওয়ামী লীগ যখনই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে, তারা দেশের জনগণের ওপর জুলুম-অত্যাচার করে তাদেরকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করা। কিন্তু আজ জাতিকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। একটি জাতিকে আত্মনির্ভরশীল সুখী-সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। জাতি হিসেবে পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে বসে জনগণের চাওয়া পাওয়ার সঠিক প্রতিফলন হয়নি। দেশের মৌলিক কোনো বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেই। একটি রাষ্ট্রকে যদি মাথা উুঁচু করে দাঁড়াতে হয় তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যারা দেশ পরিচালনা করেছেন তাদের দায়িত্ব ছিলো বিভেদের পরিবর্তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে নেয়া। কিন্তু তারা সে কাজ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের একক দাবীদার আওয়ামী লীগ প্রকৃত অর্থে বাকশাল গঠন করে দেশকে আরো গভীর সঙ্কট ও ষড়যন্ত্রে আবদ্ধ করে ফেলেছিল।

তিনি মহান বিজয়কে অর্থবহ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং দেশ গড়ার প্রয়োজনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আজ আমরা এমন একটি দিনে বাংলাদেশে বিজয় উৎযাপন করছি, সত্যিকার অর্থে কি দেশের জনগণ এই বিজয়ে সন্তুষ্ট? সত্যিকার অর্থে কি দেশের মানুষ বিজয়ের হাসি হাসতে পেরেছে? সত্যিকার অর্থে কি বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষ বিজয়ের স্বাদ পাচ্ছে? সত্যিকার অর্থে জনগণ কি অর্থনৈতিকভাবে বিজয় পেয়েছে? আওয়ামী অপশাসনের ফলে সর্বক্ষেত্রে আমরা নেতিবাচক জবাব পাচ্ছি। তাই বাংলাদেশের জনগণের প্রকৃত কল্যাণ বয়ে আনতে ব্যর্থ এই সকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এমআই