আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে জামায়াতের আলোচনা সভা
Share on:
আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে রোববার (১৩ আগস্ট) ভার্চুয়াল এক আলোচনা সভা আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহাগনরী উত্তরের যুব বিভাগ। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ও যুব বিভাগের সভাপতি ডা. ফখরুদ্দীন মানিকের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও যুব বিভাগের সেক্রেটারি নাসির উদ্দীনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসা। বিশেষ অতিথির আলোচনা রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ইয়াছিন আরাফাত প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, আজকের যুব সমাজই জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যুগে যুগে যুবকরাই ইতিহাস সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তারাই পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে স্রোতের গতিধারা। যুব সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সুখি, সমৃদ্ধ, ইনসাফপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব।
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ ও জাতি এক গভীর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য যুবকদেরকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। অন্যথায় আমাদের মুক্তি মিলবে না।
তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে এক কঠিন পরিস্থিতি। সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আবারো তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নীলনঁকসা প্রণয়ন করছে। তাই সরকারের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় এবং জাতিকে আলোর পথ দেখানোর জন্য যুব সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এসময় তিনি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য সকলকে রাজপথে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
প্রধান আলোচক আব্দুর রহমান মূসা বলেন, পৃথিবীর ইতিহাস যুব সমাজের হাতেই নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের যত বড় বড় অর্জন সবই হয়েছে যুব সমাজের হাত ধরেই। হাজী শরীয়তুল্লাহ, শহীদ তিতুমিরের মত প্রাণচঞ্চল যুবকদের হাতেই এসেছে আমাদের বড় বড় অর্জন। তাই জাতির এই ক্রান্তিকালে যুব সমাজকে ঘরে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই বরং সত্যের পতাকা উড্ডীন ও আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে শপথ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের অতিমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সার কারণেই জাতির গন্তব্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তারা নৈশ্য ভোটের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। সত্যের উপরে মিথ্যার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এমতাবস্থায় আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য যুব সমাজের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
এসময় তিনি সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ময়দানে কাজ করার আহ্বান জানান।
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, যুবকদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। যৌবনকালের ইবাদত আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য। পৃথিবীর সকল বিপ্লবই সাধিত হয়েছে যুব সমাজের হাত ধরেই। আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ.)-এর ভাষায়, সফল বিপ্লবের জন্য এমন এক যুব সমাজ দরকার যারা বাতাসের গতিতে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। মুতার যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদসহ (রা.) ইসলামের সকল বড় বড় বিজয় অর্জিত হয়েছে তারুণ্যদীপ্ত যুব সমাজের হাত ধরেই। ১৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন কাসিম হাতেই সিন্ধু বিজয় এবং ইখতিয়ার উদ্দীন বিন বখতিয়ার খলজীর তারুণ্যের কাছেই রাজা লক্ষ্মণ সেন পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাই দেশ ও জাতিকে সঙ্কটমুক্ত করতে সকল ক্ষেত্রে তারুণ্য নির্ভর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফখরুদ্দীন মানিক বলেন, যৌবনকাল হচ্ছে জীবনের উল্লেখযোগ্য সময়। ব্যক্তির সকল বড় বড় অর্জনই হয় যৌবনকালে। আল্লাহ প্রত্যেক বান্দাকে আখেরাতে ৫টি প্রশ্নের উত্তর চাইবেন। আর এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন হচ্ছে, তার যৌবনকাল কিভাবে অতিবাহিত হয়েছে? তাই যৌবনকালকেই দুনিয়াতে ও আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।
এ আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে সহস্রাধিক যুব প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি