tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:১০ পিএম

সিনওয়ার গাজা ছাড়বেন না, যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সক্ষমতা হামাসের আছে


864414_160

গাজা উপত্যকায় ১১ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কাছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে- এমন দাবি করেছেন তাদের এক সিনিয়র কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেছেন, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার কোনো অবস্থাতেই গাজা ছাড়বেন না।


রোববার ইস্তাম্বুলে এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওসামা হামদান বলেন, 'প্রতিরোধ বাহিনীর এ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার উচ্চ ক্ষমতা রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এ যুদ্ধে অনেকে শহীদ হয়েছেন এবং অনেক আত্মত্যাগও ছিল... কিন্তু, এর বিনিময়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়েছে এবং প্রতিরোধ বাহিনীতে নতুন প্রজন্মদেরও নিয়োগ করা হয়েছে।'

তিনি এ মন্তব্যটি করেন এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে যখন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, গাজায় সামরিক বাহিনী হিসেবে হামাসের 'আর কোনো অস্তিত্ব নেই।' হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় যুদ্ধটির সূত্রপাত ঘটে।

রোববার হামদান বলেন, 'এই যুদ্ধের যে আকার, মাত্রা এবং পরিসর অনুযায়ী হতাহতের সংখ্যা যতটুকু ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক কম।'

নেতানিয়াহুর উপর চাপ

গত বছর ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের অতর্কিত হামলার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে পাল্টা অভিযান শুরু করেন। ইসরাইলের সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপি’র হিসেবে হামাসের হামলায় ১,২০৫ জন নিহত হয়, যাদের বেশিভাগ বেসামরিক।

ইসরাইলের সামরিক অভিযান গাজায় অন্তত ৪১,২০৬ জনকে হত্যা করেছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হামাস-পরিচালিত মন্ত্রণালয় সামরিক এবং বেসামরিক হতাহতের আলাদা হিসাব দেয় না।

হামাস ৭ অক্টোবর ২৫১জনকে পণবন্দী করে নিয়ে যায়, যাদের মধ্যে ৯৭ জন এখনো তাদের হাতে রয়েছে। তবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে, পণবন্দীদের ৩৩ জন মারা গেছেন।

পণবন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেয়ার চুক্তির জন্য নেতানিয়াহু দেশের ভেতর প্রবল চাপের মুখের রয়েছে।

এ’মাসে ইসরাইল গাজার এক সুরঙ্গ থেকে ছয়জন পণবন্দীর মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং ঘোষণা দেয় যে তাদের হামাস হত্যা করেছে। এর ফলে সারা দেশে ব্যাপক শোক এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, একটি সংক্ষিপ্ত সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয় এবং তেল আবিব আর জেরুসালেমে বড় বিক্ষোভ চলতে থাকে।

কিন্তু যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতারের মধ্যস্থতায় মাসের পর মাস আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে অসন্তুষ্টি

হামদান বলেন, ইসরাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সমর্থক, যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুর সাথে আলোচনা করে ফিলিস্তিনে রক্তপাত বন্ধ করবে এমন চুক্তি নিশ্চিত করতে যথেষ্ট চেষ্টা করছে না।

হামদান বলেন, 'আমেরিকার প্রশাসন ইসরাইলি পক্ষের উপর যথেষ্ট বা উপযুক্ত চাপ প্রয়োগ করে না।'

তিনি বলেন, 'বরং তারা ইসরাইলি পক্ষের যেকোনো ধরণের অঙ্গীকার এড়ানোকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।'

যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে।

এই মাসের শুরুতে কর্মকর্তারা ছয়জন পণবন্দীর মৃত্যুর ঘোষণা করার পরে দুটি সংবাদ সম্মেলনের সময় নেতানিয়াহু বলেন, হামাসই আপস করতে অস্বীকার করে এবং অবশিষ্ট পয়েন্টগুলো নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো নিয়ে 'চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার' জন্য অঙ্গীকার করে।

তিনি আরো বলেন, ইসরাইলের সামরিক অভিযানে 'কমপক্ষে ১৭,০০০ জন' হামাস বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।

হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করেছে, কিন্তু ইসরাইল এই গ্রুপটিকে নির্মূল করার জন্য আহ্বান জানানোর কারণে যুদ্ধের পরে তারা কী আকারে থাকবে তা স্পষ্ট নয়।

সিনওয়ার গাজা 'ছাড়বেন না'

হামাদান রোববার বলেন, হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার অবরুদ্ধ এলাকা ছেড়ে দিবেন- এমন পরিস্থিতি কল্পনা করা অসম্ভব।

হামদান বলেন, সিনওয়ার এবং অন্যান্য নেতারা 'ফিলিস্তিন ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে লক্ষবার শহীদ হতে প্রস্তুত কারণ তিনি যা যা করছেন তার সবই ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য করছেন।'

হামাস ফিলাডেলফি করিডোরসহ গাজা থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসরাইলিদের প্রত্যাহারের দাবি করেন। ফিলাডেলফি করিডোর মিসরের সীমান্ত বরাবর একটি সংকীর্ণ ভূমি যা যুদ্ধবিরতি আলোচনার অগ্রগতিতে মূল বাধা হিসেবে উঠে এসেছে।

হামদান বলেন, হামাস গাজায় 'যৌথ ফিলিস্তিনি শাসন' চায়। তিনি আরো বলেন, হামাস কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গ্রুপের প্রতিনিধিরা তাদের যুদ্ধ-পরবর্তী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করার জন্য শিগগিরই কায়রোতে মিলিত হবে।

তিনি বলেন, 'যুদ্ধ শেষের পরের দিনটি হবে একটি ফিলিস্তিনি দিন।'

সূত্র : ভিওএ

এফএইচ