সরকারের সাথে আলোচনায় ৩ শর্ত ইমরান খানের
Share on:
কারাবন্দী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান সরকারের সাথে আলোচনার জন্য তিনটি শর্ত পেশ করেছেন।
রোববার পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা নিউজ ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সরকারের সাথে আলোচনার জন্য তিনটি শর্ত পেশ করেছেন।
আদালতের কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে অনানুষ্ঠানিক আলাপকালে ইমরান খান এই শর্তগুলো পেশ করেন।
ইমরান খানের প্রথম শর্ত হলো- আমার মামলাগুলো খারিজ করা উচিত, দ্বিতীয়টি হলো- আমাদের দলের সদস্যদের মুক্তি দেয়া এবং তৃতীয়টি- আমাদের ম্যান্ডেট ফিরিয়ে দেয়া।
এদিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রীর সাত বছরের কারাদণ্ড শনিবার (১৩ জুলাই) বাতিল করেছে দেশটির একটি আদালত।
রায়ের বিষয়ে খানের আইনজীবী বলেন, কথিত বেআইনিভাবে বিবাহের অভিযোগে ২০১৮ সালে দায়ের করা এক মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। তাকে কারাগারে পাঠানোর প্রায় এক বছর পর মুক্তির সর্বশেষ বাধাটি দূর হলো।
ইমরান খানের অন্যতম আইনজীবী নাঈম পাঞ্জুথা বলেন, আদালত রাওয়ালপিন্ডির গ্যারিসন শহরে এই রায় ঘোষণা করেন। আর এখানেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আটক রাখা হয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি আপিল আদালত ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও সাজা বহাল রাখার আদেশের দুই সপ্তাহ পর খালাস পেলেন তারা।
আদালত তার সংক্ষিপ্ত আদেশে বলেছে, যদি এই দম্পতিকে অন্য কোনো মামলায় অভিযুক্ত না করা হয় তবে তাদের মুক্তি দিতে হবে।
বুশরা বিবি হলেন ইমরান খানের তৃতীয় স্ত্রী এবং একজন আধ্যাত্মিক গুরু। ইমরান খানের সাথে বিয়ে হওয়ার মাত্র তিন মাসেরও কম সময় আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল বুশরা বিবির। পাকিস্তানের ইসলামী আইন অনুযায়ী, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারীদের ক্ষেত্রে নতুন বিয়ের আগে তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়।
বুশরা বিবি বলেছেন, ২০১৭ সালের আগস্টে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। এই দম্পতি বিচারের সময় জোর দিয়েছিলেন তারা অপেক্ষার সময়সীমা লঙ্ঘন করেননি।
আদালতের আদেশে সরকার কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা স্পষ্ট নয়। ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে কর্তৃপক্ষ।
ইমরান খানের দলকে অন্যায়ভাবে সংসদে কমপক্ষে ২০টি আসন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়ার এক দিন পর এই আদেশটি আসলো। এটি দেশটির দুর্বল শাসক জোটের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা।
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টিকে এর আগে জাতীয় পরিষদ বা সংসদের নিম্নকক্ষে নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত অতিরিক্ত আসন দেওয়ার ব্যবস্থা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। যদিও এই রায় ইমরান খানের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বিজয় ছিল। তবে এটি তার দলকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো অবস্থানে রাখতে পারবে না। শাহবাজ গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরে ক্ষমতায় আসেন। তবে ভোটে কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করে আসছেন খান মিত্ররা।
২০২৩ সালের মে মাসে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সহিংসতায় উস্কানিসহ দেড় শতাধিক মামলায় জড়ানো হয় ইমরান খানকে। এরপরে সারা দেশে দাঙ্গার সময় খানের সমর্থকরা সামরিক ও সরকারি ভবনগুলোতে আক্রমণ করে। উত্তর-পশ্চিমে রাষ্ট্রায়ত্ব রেডিও পাকিস্তান এর আবাসিক একটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।
সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানকে মুক্তি দেয়ার পরেই সহিংসতা কমেছিল। দুর্নীতির দায়ে আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়ার পরে ২০২৩ সালের আগস্টের শুরুতে খানকে আবারো গ্রেফতার করা হয়।
এরপর থেকে যেসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সেসব মামলায় বিভিন্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি।
সূত্র : দ্যা নিউজ ইন্টারন্যাশনাল
এনএইচ