আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সম্প্রচার অনিশ্চয়তার মুখে
Share on:
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দুয়ারে। আগামী ১৬ অক্টোবর শুরু হবে ছোট ফরম্যাটের বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াই। ২২ গজের বিশ্বকাপের উত্তেজনা ছড়িয়েছে অলিতে-গলিতে, পাড়া-মহল্লায় বা চায়ের দোকানে।
টিভি বা মুঠোফোনে এই রোমাঞ্চ দেখতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সবাই। এমন অবস্থায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সম্প্রচার নিয়ে। ব্যাংকিং জটিলতায় আশঙ্কার মেঘে ঢাকা পড়েছে দেশে বিশ্বকাপের সম্প্রচার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাকা পাঠানোর ছাড়পত্র না পাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া সব শর্ত পূরণ করেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্র বা ‘লেটার অব ইন্টেন্ট’ না পাওয়ায় খেলার সম্প্রচারস্বত্ব কিনতে পারছে না দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এই অবস্থায় বিশ্বকাপ সম্প্রচারে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোও।
এর ফলে বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন দেশের কোটি ক্রিকেট ভক্ত। পছন্দের সাকিব-লিটনদের খেলা দেখার সম্ভাবনা দিনদিন মলিন হয়ে যাচ্ছে সম্প্রচার অনিশ্চয়তায়। শুধু তাই নয়, এ খাত থেকে আসা বিশাল পরিমাণে রাজস্ব হারাতে পারে বাংলাদেশ সরকারও।
বিশ্ব-ক্রিকেটের বড় বড় টুর্নামেন্টের সম্প্রচার বাজার থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। গত দুই বছরে এই রাজস্ব আয় বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র অনুসারে, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ এর মতো আন্তর্জাতিক খেলা সম্প্রচারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে স্টার স্পোর্টস এবং সনি পিকচার্স নেটওয়ার্ক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের সহায়তায় গুগল এবং ফেসবুকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও বড় অঙ্কের রাজস্ব অর্জন করছে সরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রচারস্বত্বধারীদের কাছ থেকে এ রাজস্ব পেয়েছে এবং দেশের টিভি দর্শকরা এসব অনুষ্ঠানের নিরবচ্ছিন্ন লাইভ সম্প্রচার উপভোগ করছে।
এদিকে, ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হতে পারে এশিয়া কাপের সম্প্রচারস্বত্বের বকেয়া বিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি না পাবার কারণে আটকে আছে বকেয়া বিল পরিশোধ। গতমাসে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের বিল অতি দ্রুত পরিশোধ করা না গেলে দেশীয় চ্যানেলগুলোর সাথে সম্প্রচারস্বত্বধারীদের সুসম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের, এমনকি আইসিসি থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রচারস্বত্বের সুযোগও হারাতে হতে পারে এই জটিলতায় ।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কাতে এই জটিলতার কারণে তারা সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ তাদের নিজ দেশে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
শুধু তাই নয়, একইভাবে ফেসবুক ও গুগলের বিজ্ঞাপন বাবদ প্রায় ৫ মাসের বকেয়া আটকে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে। এতে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।
সম্প্রচারস্বত্বের অন্যতম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মিডিয়াকমের সিইও অজয় কুমার কুন্ডু বলেন, ‘দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞাপন, ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচার করে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু বিধি-নিষেধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক ও ইউটিউবের পাওনা টাকা প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। ফেসবুক ও ইউটিউবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু টাকা পাঠানো হচ্ছে তা কিন্তু নয় বরং ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচুর টাকা বাংলাদেশেও আসছে।
প্রাসঙ্গিক আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক খেলার প্রচারস্বত্ব কিনেছি যার বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার ভ্যাট ও ট্যাক্স পেয়ে আসছে। যদি বৈধভাবে টাকা পাঠানোর অনুমোদন বা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অসাধু পথ অবলম্বন করবে।
তাই বৈধপথ অর্থ পাঠানোর সুবিধার্থে যদি দ্রুতই কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসা যায়, সেটি সরকার এবং ব্যবসায়ী, উভয়ের জন্যই ভালো হবে।’
এ বিষয়ে এশিয়াটিক মাইন্ড শেয়ার এর এমডি মোর্শেদ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ দল অংশগ্রহণ করায় বরাবরের মতো এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরও দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। গতবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ভালো করেছে।
তাই ক্রিকেটারদের ঘিরে আমাদের আগ্রহ ও প্রত্যাশা বেড়েছে। এবারের বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর সম্প্রচার কোনো কারণে ব্যর্থ হলে খেলাধুলা নিয়ে পৃষ্ঠপোষকদের মাঝে অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। যা ভবিষ্যতে দেশের ক্রীড়া অঙ্গনে প্রভাব ফেলবে।’
এ বিষয়ে স্পোর্ডিয়াম এর সিইও জিয়াউদ্দিন আদিল বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায়, ফরেন এক্সেচেঞ্জ এবং রাজস্ব খাতের হার নির্ধারণ করে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ সমূহ দেখানোর বিষয়ে একটি পদ্ধতিগত নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বিগত কয়েক বছর যাবৎ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খেলাগুলো এই নিয়ম-নীতি পরিপালন সাপেক্ষে সুষ্ঠুভাবে সম্প্রচার করার আয়োজন করে আসছি।
কিন্তু সম্প্রতি এশিয়া কাপের মতো একটি বড় ইভেন্ট বিশেষ বিবেচনায় সম্প্রচার করার পরও আমরা সম্প্রচার-সত্বের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। এই অনিশ্চয়তায় আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ডকাপ ও ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া নারী এশিয়া কাপের সম্প্রচারে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
এতে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক খেলাকে ঘিরে বিজ্ঞাপন বাজারে দেশীয় গণমাধ্যমে শতাধিক কোটি টাকার বিজ্ঞাপনকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের সুযোগ তৈরি হয়। এতে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ সরকারের ব্যাপক রাজস্ব আয় হয়। তাই এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে দ্রুতই পদক্ষেপ আশা করছি।’
সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘনিয়ে এলেও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে টুর্নামেন্টের সম্প্রচার। বাংলাদেশ ব্যাংক যথাসময়ে ব্যবস্থা না নিলে আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ থেকে বঞ্চিত হবেন দেশের ক্রীড়া পাগল জনগণ এবং সংকটকালে রাজস্ব হারাবে বাংলাদেশ সরকার।
এন