মাঝরাস্তা পর্যন্ত বসেছে হকার, কোনোরকমে একপাশ দিয়ে চলছে গাড়ি
Share on:
রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার আশপাশ কিংবা ফুটপাত দখল করে হকারদের দোকান বসানোর বিষয়টি মোটামুটি চিরাচরিত দৃশ্য। এখন তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে দখল করে বসেছেন একেবারে মাঝরাস্তা পর্যন্ত।
বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও রিকশা কোনোরকমে রাস্তার একপাশ দিয়ে চলাচল করছে। এতে যানজটের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে আগের চেয়ে। এ অবস্থায়ও নীরব ভূমিকায় দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার সড়কগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড় থেকে রাস্তার উভয় পাশের ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। এর মধ্যে বাম পাশের সড়কের ফুটপাতের একপাশে চৌকি বসিয়ে আরেক পাশে দড়ি টানিয়ে কাপড়ের পসরা সাজানো হয়েছে। আর মূল রাস্তার ওপর ঝুড়ি, ভ্যান বসিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ফল।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের রমনা ভবন মার্কেটের সামনের সড়কের ফুটপাত দখলের পাশাপাশি মূল সড়কেও বসানো হয়েছে দোকান। শাহ আলী মাজার এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। মোড়ের জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের জন্য সরু জায়গা ছাড়া পুরো প্রাঙ্গণই দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। এর সামনের টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনের সড়কের ৮০ শতাংশ দখল করে আছেন হকাররা।
স্টেডিয়াম রোড থেকে মাজার রোডে যেসব গাড়ি আসছে সেগুলোকে আসতে হচ্ছে সড়কের একপাশ দিয়ে। বাকি রাস্তা হকারদের দখলে। মূল সড়কে ঘোড়ার গাড়ি, মিনিবাস, বড় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এ অবস্থায় পুরো এলাকাজুড়েই তৈরি হয়েছে অসহনীয় যানজট। মাত্র পাঁচ মিনিটে অতিক্রম করা যাবে এমন সড়ক পার হতে লাগছে আধা ঘণ্টা।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি অধিকাংশ হকার। অনেকে আবার কথা বলতে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
রবিউল নামে এক হকার বলেন, সবকিছু ম্যানেজ করেই এখানে বসেছি। এখানে না বসলে কোথায় বসব? জায়গা বের করে দেন।
বেলাল হোসেন নামে এক হকার বলেন, আমরা তো রাস্তার সাইডেই বসেছি। যারা মাঝে বসেছে তাদের তুলে দিন। ওদের জন্যই পরে আমাদের সমস্যা হয়।
বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বাসযাত্রী ও সাধারণ পথচারীরা। তারা বলছেন, ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা মেনে নেওয়ার মতো নয়। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই। এই দোকানগুলো রাস্তা ও ফুটপাত দখল করায় পথচারীদের চলাচলে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি যানজট বাড়ে এবং নগরীর সৌন্দর্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। আবার কিছু সময় পরই তাদের পুনরায় সেই জায়গা দখল করতে দেখা যায়। কারণ তাদের জীবিকা নির্বাহের নির্ভরযোগ্য আর কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ের স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত।
আব্দুল লতিফ নামে এক বাসযাত্রী বলেন, ২০ মিনিট ধরে এখানে বসে আছি। পার হতে পারছি না। পরে বাস থেকে নেমে গেছি। পুরো রাস্তাটাই দখল হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।
কামরুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, ঢাকা শহরে হকারদের স্থায়ী বসার জায়গা বা বিকল্প ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত তারা ফুটপাত দখল করতেই থাকবে। এ জায়গাটুকু পার হতে অনেক সময় লেগে যায়। অথচ সড়কগুলো যথেষ্ট প্রশস্ত। হকাররা দখল করে রেখেছেন অর্ধেকের বেশি। ফুটপাতের দখল সমস্যা নিরসনে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দরকার। নগরীর সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও পথচারীদের সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি গুলিস্তান ও আশপাশে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক বিভাগের কোনো পুলিশ কর্মকর্তা।
এসএম