tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৮ পিএম

জনগণ যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করছে: মুজিবুর রহমান


shibir

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, জাতি এক মহা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জনগণ এখন সুনাগরিক ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্রভাবে অনুভব করছে। আর এই কাঙ্খিত নাগরিক ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ছাত্রশিবিরকেই পূরণ করতে হবে।


শুক্রবার (২৪ ফেব্রয়ারি) ছাত্রশিবির আয়োজিত ভার্চুয়াল ‘উপশাখা প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সেলিম উদ্দিন, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, দেলাওয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম সহ সেক্রেটারিয়েট সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

আমীরে জামায়াত বলেন, ছাত্রশিবির আল্লাহর পক্ষ থেকে জাতির জন্য একটি নেয়ামত। ছাত্রশিবির নিছক কোনো দুনিয়াবি সংগঠন নয়; বরং এ সংগঠন পরিচালিত হয় মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি অবিচল আস্থা, বিশ্বাস, দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার লক্ষ্যে। দুনিয়ার কোনো লেজুরভিত্তি এ সংগঠনের লক্ষ্য নয়; বরং মহান আল্লাহ তায়ালার নিরঙ্কুশ দাসত্ব মেনে নেওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুমিনদের সফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ছাত্রশিবিরও কুরআনের আলোকে সার্বিক জীবন পরিচালনার মাধ্যমে তরুণ ছাত্রসমাজকে মুমিন হিসেবে গড়ে তোলার মিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তবে মুমিন বান্দা হতে হলে সুদৃঢ় প্রত্যয় ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। শুধু কয়েকটি নির্দিষ্ট আমল নয়; বরং একজন মুমিনের প্রতিটি কাজই আমল হবে। এজন্য জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সর্বক্ষেত্রে সকল কাজ হবে আখিরাত কেন্দ্রীক।

তিনি বলেন, একজন মুসলমানের কাছে সময়ের মূল্য অনেক বেশি। প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। সাদাসিধে জীবনযাপন মুমিন জীবন গঠনে সহায়ক। তাই জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ এবং কর্মকাণ্ড কুরআনের আলোকে পরিচালনা করতে পারলেই একজন মুসলমান প্রকৃত মুসলমান হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে, ইনশাআল্লাহ। এ লক্ষ্য নিয়েই ছাত্রশিবিরের পথচলা শুরু হয়েছে এবং সব প্রতিকূলতা মাড়িয়ে লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলছে।

সংগঠনটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিন বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠায় সকল শ্রেণি-পেশার মুসলমানের যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব রয়েছে। তবে সকলকে অবশ্যই দাওয়াতি কাজ করতে হবে। কেননা, রাসূল সা.-এর সুস্পষ্ট নির্দেশ হলো ‘প্রচার করো, যদি একটিমাত্র আয়াতও হয়’। তবে দাওয়াতকে ফলপ্রসূ করতে নিজেদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে। কী প্রচার করছি, কেন করছি, কীভাবে করছি এবং দাওয়াতের সাথে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে কি না তা খেয়াল করতে হবে। মনে রাখতে হবে-আমরা প্রত্যেকেই দাঈ ইলাল্লাহ এবং একজন দাঈ ইলাল্লাহর দাওয়াতি লক্ষ্য নির্দিষ্ট থাকে। একজন দাঈ লক্ষ্যে পৌঁছাতে সার্বক্ষণিক দাওয়াতি চিন্তা নিয়েই পথ চলে। ছাত্রশিবির দাঈর দায়িত্ব থেকেই প্রতিটি জনপদে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ইসলামের সুমহান আদর্শ পৌঁছে দিতে বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রচেষ্টাকে আরও বেগবান করতে হবে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইসলাম নিছক কয়েকটি ইবাদতের নাম নয়; ইসলাম হলো সেই আদর্শের নাম-যা একটু ঘুনে ধরা সমাজ ও রাষ্ট্রকে আমূল পরিবর্তন করে কাঙ্খিত কল্যাণময় সমাজ-রাষ্ট্রে পরিণত করে। আর এ পরিবর্তনের মূল কাজটি করে সেই সমাজেরই তরুণ ও যুবসমাজ। আজ ইসলাম আছে, সাথে সাথে ঘুনে ধরা সমাজটাও আছে। এখন প্রয়োজন সেই সমাজটাকে ভেঙে ইসলামের আলোকে গড়ে তোলা যেই সমাজ কায়েম করেছিলেন স্বয়ং রাসূল সা.। সুতরাং এ পরিবর্তনের জন্য ছাত্রশিবিরের জনশক্তিদের দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। কুরআনের আলোকে আগামীর কল্যাণময় সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে নিজেদের সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইসলামের সোনালি যুগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তরুণ ও যুবসমাজের ঈমানি দৃঢ়তা, সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও সমাজ পরিবর্তনের দৃঢ় চিন্তার উপর। আজও একই পন্থা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই।

দেলাওয়ার হোসাইন বলেন, যুগ জামানা পালটে দেওয়ার যে ইতিহাস আমাদের আপ্লুত করে, তার প্রতিটির পেছনে রয়েছে সীমাহীন ত্যাগ-কুরবানির ইতিহাস। ইসলাম একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের নাম। ইসলামের প্রতিটি অর্জন, প্রতিটি বিজয় ও সোনালি যুগ নির্মিত হয়েছে অকল্পনীয় ত্যাগের ওপর। দ্বীনের জন্য রাসূল সা. ও তাঁর সাহাবা আজমাইনদের ত্যাগ-কুরবানি উম্মতের জন্য পাথেয়। সত্য পথের যাত্রীদের পথচলা সব সময়ই বৈরি হয়। কিন্তু উম্মতের বীর সন্তানরা অবিচল মানসিকতা, বিচক্ষণতা ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মনজিলে মকসুদ পানে এগিয়ে চলে। আর এটাই চূড়ান্ত সফলতার মূল পথ।

রাশেদুল ইসলাম বলেন, ইসলামের প্রচার, প্রসার, প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করা প্রতিটি মুসলমানের আবশ্যকীয় দায়িত্ব। আর একা বা ব্যক্তিগতভাবে এ দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। কীভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীনি আন্দোলন জারি রাখতে হবে-তা স্বয়ং রাসূল সা. তাঁর সাহাবা আজমাইনদের সাথে নিয়ে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। সুতরাং উম্মতের জন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। তাই দ্বীনি আন্দোলনকে জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করতে হবে। ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনে গভীর আস্থার সাথে কাজ করতে হবে। দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকামী একজন মুসলমানকে অবশ্যই ইসলামী আন্দোলনের কাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মনজিলে মকসুদে পৌঁছাতে আন্দোলন ও সংগঠন নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। ইসলামী ছাত্রশিবির দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার জন্য সেই মনজিল লক্ষ্যপাণে এগিয়ে চলেছে। মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি অবিচল আস্থা ও ঈমানি দৃঢ়তা নিয়ে ছাত্রশিবির যে কোনো মূল্যে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাবে।

সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান বলেন, ইসলাম এসে আইয়ামে জাহেলিয়াত দূর করেছিল। এখন বিশ্ববাসী বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ নব্য জাহেলিয়াত দ্বারা আক্রান্ত। এই জাহেলিয়াতকেও ইসলামের আলো দিয়ে দূর করতে হবে। তবে জাহেলিয়াত দূর করতে হলে নিজেকে আগে কুরআনের আলোকে তৈরি করতে হবে। অব্যশই কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য চর্চা অধ্যয়নের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিজেকে উত্তীর্ণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রশিবিরের জনশক্তিদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা সমাজ বিনির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে চলেছি। এ পথে বাধা যেমন অনিবার্য, তেমনি ঈমানি দৃঢ়তা ও আল্লাহ তায়ালার ওপর অবিচল আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে এগিয়ে গেলে সফলতাও নিশ্চিত। সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভর করে আমরা আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

এমআই