জুমার দিন যেসব ভুল করবেন না
Share on:
জুমাবার মুমিনের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন। সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সূর্য যেসব দিন উদিত হয় অর্থাৎ দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কেয়ামতও সংঘটিত হবে এই দিনেই। (সহিহ মুসলিম: ৮৫৪; মুসনাদে আহমদ: ৯৪০৯; তিরমিজি: ৪৮৮)
দিনটির ব্যাপারে মুসলমানদের জন্য হাদিসের নির্দেশনা হলো- দিনটির পবিত্রতা রক্ষা করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, জুমার দিন আমাদের এমন কিছু ভুল হয়ে যায়, যা মোটেও উচিত নয়। এখানে সেরকম পাঁচটি ভুল নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা করতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিসে। যেমন—
১. পরিপাটি না হয়ে জুমায় যাওয়া
অনেকে জুমার দিনে পরিচ্ছন্ন হওয়াকে তেমন গুরুত্ব দেন না। অথচ, জুমার নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করা, পরিপাটি হয়ে মসজিদে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। প্রিয়নবী (স.) সাহাবায়ে কেরামকে জুমার দিন গোসলের ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, যথাসাধ্য উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে এবং নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দুজন লোকের মধ্যে ফাঁক না করে (অর্থাৎ পরে গিয়ে মানুষের ঘাড় টপকে সামনে যাওয়ার চেষ্টা না করে), অতঃপর তার নির্ধারিত নামাজ আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারি: ৮৮৩)
উল্লেখিত হাদিসে জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই সবার উচিত জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করা ও পরিচ্ছন্ন হওয়া। যদি সামর্থ্য থাকে, সুগন্ধি ব্যবহার করা। এছাড়াও ভালো জামা পড়ে মসজিদে যাওয়া। রাসুল (স.) নিজেও এই দিন ভালো ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন।
২. মসজিদে দেরি করে যাওয়া
জুমার দিন একটু আগেভাগে মসজিদে যাওয়া উচিত। জুমার খুতবা শোনাও জরুরি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (সহবাস পরবর্তীকালে) গোসলের মতো গোসল করে এবং নামাজের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভী কোরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করলো। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করলো সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করলো, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করল। (বুখারি: ৮৮১)
তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের দিকে রওনা করা জরুরি।
৩. জুমার সময় অন্য কাজ করা
জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ করা নিষিদ্ধ। জুমার প্রথম আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা কিংবা অন্য কাজে বিরতি দেওয়া উচিত। ইয়াহইয়া ইবনু সাইদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, আয়েশা (রা.) বলেছেন—লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমার জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে ভালো হতো..। (বুখারি: ৯০৩; মুসলিম: ৮৪৭)
৪. মনোযোগ দিয়ে খুতবা না শোনা
খুতবা শোনা জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ঠিকভাবে খুতবা শোনা জরুরি। তবে যদি মুসল্লি বেশি হওয়ার কারণে অথবা অন্যকোনো কারণে খুতবার আওয়াজ না শোনা যায়, তবে নীরব থাকাই নিয়ম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—‘যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অজু করে জুমার নামাজে এলো, নীরবে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, তাহলে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো। (মুসলিম: ১৮৭৩)
৫. খুতবার সময় কথা বলা
জুমার খুতবা শোনা শুধু সওয়াবের কাজ না, এটি ওয়াজিব। তাই খুতবার সময় কোনো কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে চুপ থাকতে বলাও নিষেধ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন—‘জুমার দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে চুপ থাকো বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে’ (বুখারি: ৯৩৪, মুসলিম: ৮৫১)। তার মানে হলো, খুতবার সময় মুখ পুরোপুরি বন্ধ রাখা চাই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার পবিত্রতা রক্ষা করা ও সঠিকভাবে জুমার নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এনএইচ