অস্ত্র দেখিয়ে চলছে বালু উত্তোলন, নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি
Share on:
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারায় পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের মহাকর্মযজ্ঞ চলছে।
পাবনা ও কুষ্টিয়ার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নদীর তীর ঘেষে বালুর উত্তোলনের ফলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে কৃষকদের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের চর কণ্ঠগজরা এলাকায় বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখলে মনে হবে এটি কোনো নৌবন্দর। সেখানে প্রকাশ্যে ২০ থেকে ৩০টি ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শতাধিক ট্রলারের মাধ্যমে এসব বালু চলে যাচ্ছে পাবনার ভাড়ারা, দোগাছী, পাকশী, সুজানগর, কুষ্টিয়ার পাংশা, কুমারখালী ও রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হয় এখানে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষকরা বলেন, ‘নৌকা থেকে অস্ত্র দেখিয়ে তারা বালু উত্তোলন করে। বছরের পর বছর ধরে এই কাজ চলে আসছে। এভাবেই ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আমরা ধারণ করেছিলাম সরকার পতনের পর বালু উত্তোলন বন্ধ হবে কিন্তু এখনো প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ দেখি না। আর আমরা প্রতিবাদ করলেই আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আপনাদের চোখেই দেখুন কীভাবে শত শত ফসলি জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জে সহযোগী আব্দুল আলিম এবং পাবনার ভাড়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মাহমুদ খানসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে এই বালু উত্তোলনের মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। এছাড়া নৌ-পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন চলে। গত বুধবার বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করায় তিন কৃষককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ কথা বলতে সাহস করছেন না।
তবে পাবনার ভাড়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ‘গত এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার জড়িত থাকার বিষয়টি মিথ্যা।’
এ বিষয়ে চেষ্টা করেও পুলিশ সুপারসহ জেলা প্রশাসনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি মিথ্যা বলে মন্তব্য করে পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা যখন অভিযানে যাই তখন তারা পালিয়ে যায়। আমাদের জনবলও কম। তারপরও আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আবারও অভিযান চালাব।’
এনএইচ