tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশনার সময়: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:৪১ পিএম

গাড়িতে অবহেলিত সংরক্ষিত আসন


36

নাজমুল হাসান : দৈনন্দিন ব্যস্তময় জীবনের জরুরি প্রয়োজন এবং জীবিকার তাগিদে নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীসহ সবাইকে ছুটতে হয় নিজ নিজ কর্মস্থলে। ফলে প্রতিদিনই গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখা যায় নারী যাত্রীদের অবহেলার চিত্র। রাজধানীর প্রতিটি গাড়িতে সামনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সংরক্ষিত নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নয়টি/ছয়টি আসন লেখা রয়েছে। তবে এ লেখা শুধু ওই চিরকুটেই সীমাবদ্ধ। নেই তার কার্যকারিতা, সেটি অকার্যকর অবহেলিত অবস্থায় নিমজ্জিত।


রোববার (১৫ অক্টোবর) সকালে খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় লাব্বাইক পরিবহনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা বাস আসলে অপরিকল্পিতভাবে গাদাগাদি করে তাতে অনেক পুরুষ যাত্রী দৌড়ঝাঁপ দিয়ে বাসে ওঠেন। কিন্তু বাসে ওঠার এ প্রতিযোগিতায় বেগ পেতে হয় মহিলা যাত্রীদের।

লাব্বাইক গাড়ির যাত্রী গণমাধ্যমকর্মী মোজাহিদুল ইসলাম আইনের আগে মানুষের বিবেকের অগ্রাধিকারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নারীরা মায়ের জাত, তাদের দাড়িয়ে রেখে নিজেকে বসে রাখা উচিত না। তিনি বলেন, অনেক বয়বৃদ্ধ নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে আমাদের তাদেরকে বসার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। কেননা আমরাও একটা সময় এ বয়সে উপনীত হবো; তখন আমাদেরও হয়তো আগামী প্রজন্মরা এরকম সুযোগ করে দিবেন।

এ বিষয়ে জানতে ওই গাড়ির আরেক যাত্রী আব্বাস আলীকে প্রশ্ন করলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, সমান অধিকারের যুগে আবার কিসের সংরক্ষিত আসন?

30

ওই গাড়ির যাত্রী জান্নাত বলেন, বাসের মধ্যে সংরক্ষিত নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নয়টি আসন থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসমালিকেরা শুধু একটি স্টিকারের লেখা দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যান। নির্দিষ্ট করে লেখা থাকে না কোনো কোনো আসনগুলো নারীদের জন্য সংরক্ষিত। নির্দিষ্ট করে আসন না থাকার কারণে প্রায়ই নারী ও পুরুষ যাত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সংরক্ষিত আসনে পুরুষ যাত্রী বসে পড়েন কিন্তু পরে নারী যাত্রী উঠলে তাকে আসন ছেড়ে দিতে চান না। বর্তমান সময়ে এসেও অনেক নারী আসনে পুরুষ যাত্রী বসে যান কিন্তু পাশে নারী দাঁড়িয়ে থাকেন। সংরক্ষিত আসন নারীর অধিকার, সেই বিষয়ে কেউ যদি তার আসন দাবি করেন, অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কটুকথার সম্মুখীন হতে হয়।

একই গাড়ির যাত্রী ফাহিমা বলেন, ইঞ্জিনের পাশের সিটে বসে দীর্ঘদিন যাতায়াত করতে গিয়ে নানা ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন নারীরা। এতে ত্বকের সমস্যা হয়; বিশেষ করে অ্যালার্জি ও ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, ত্বকের কারণে নানাভাবে ফোসকা পড়ে যেতে পারে। অনেকের হিট স্ট্রোকেরও উপক্রম হতে পারে। আবার অনেকের বমি, মাথাব্যাথা এমনকি জ্বরও আসে। কারণ ইঞ্জিনের উচ্চমাত্রার তাপ দেহকে উত্তপ্ত করে তোলে। এরপর বাস থেকে নামলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এভাবে শরীর একবার ঠাণ্ডা আবার গরম হয়ে পড়ায় সর্দিসহ জ্বর দেখা দিতে পারে।

পূর্বের তুলনায় বর্তমান নারী যাত্রীদের কর্মজীবনসহ সব জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাড়েনি শুধু নিরাপদ যাতায়াত বা পরিবহন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড এক গবেষণা রিপোর্টে থেকে জানা যায়, গণপরিবহনে শতকরা ৪১ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার। যৌন হয়রানি মুক্তি পেতে শতকরা ৩১ ভাগ নারী গণপরিবহনে যাতায়াত করে না, যা নারীদের কর্ম, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশ রাষ্ট্রসমাজের সবক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিরাপদ বিড়ম্বনাহীন যাতায়াত ব্যবস্থা বা বাহন নিশ্চিত না হলে নারী উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তার জন্য সংরক্ষিত আসনগুলো নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সংখ্যাও বাড়াতে হবে।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ৩০ শতাংশ মহিলা আসন সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব করা হলেও সেটা ছোট বাসে ৬টি এবং বড় বাসে ৯টি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮–এর ৯২(২) ধারা অনুযায়ী, যদি সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসেন, তাহলে ১ মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০০০ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। তবে এ আইন অন্যসব আইনের মতো চাপা পড়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ আইনের কোনো শাস্তির নজির পাওয়া খুবই দুষ্কর।

এনএইচ